Thursday 1 October 2015

HITLAR

হিটলার সম্পর্কিত পূর্ববর্তী দুটি আলোচনায় আমি যথাক্রমে হিটলারের পিতার বৈবাহিক ঘটনা ক্রম এবং তারপরের আলোচনায় হিটলার কিভাবে জার্মানির শাসনক্ষমতা দখল করেছিলেন তা নিয়ে আলোচনা করেছি | আজ আমি হিটলারের নেতৃত্বে জার্মানি কিভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগদান করল তানিয়েই আলোচনা করব |

1935 সালে হিটলার জার্মানিতে নতুন আইন চালু করে দেশের নাগরিকদের দুটি ভাগে ভাগ করে দিলেন | ( জেন্টিল এবং জু) জেন্টিল অর্থাৎ জার্মান আর জু অর্থায় ইহুদী | এই আইনে বলা হল জার্মানরা দেশের প্রকৃত নাগরিক আর জু 'রা জার্মানিতে বসবাসকারী হলেও তারা এদেশের নাগরিক নন | প্রয়োজনে তাদের দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে |
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে জার্মানির সমস্ত ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিল মিত্রপক্ষ | কিন্তু 1933 সালে হিটলার জার্মানির হাল ধরার সাথে সাথে জার্মানির অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে থাকে | হিটলার জার্মানির শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই ভার্সাই চুক্তির শর্তগুলি মানতে অস্বীকার করেন | 1934 সালে হিটলার রাষ্ট্রপতির পরিবর্তে নিজেকে জার্মানির ফুয়েরার হিসাবে ঘোষণা করেন এবং অল্পদিনের মধ্যেই নিজেকে দেশের অবিসংবাদিত নেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেন | হিটলার তাঁর সমস্ত ক্ষমতা নিয়োগ করেছিলেন দেশের সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে | এই কাজে তাঁর সহযোগীরা ছিলেন কয়েকজন সুদক্ষ সেনানায়ক এবং প্রচারবিদ | কিছুদিনের মধ্যেই হিটলার ভার্সাই সন্ধির শর্ত ভঙ্গ করে রাইনল্যান্ড অধিকার করেন | অষ্ট্রিয়া এবং ইতালি একসূত্রে আবদ্ধ হয় জার্মানির সাথে | ইতালির সর্বাধিনায়ক ছিলেন মুসোলিনী | একদিকে ইতালীর ফ্যাসিবাদী শক্তি অন্যদিকে নাৎসি জার্মানি | বিশ্বজয়ের স্বপ্নে উন্মত্ত হয়ে ওঠে ইতালি | প্রথমে আলবেনিয়া ও পরে ইথিওপিয়ার বেশ কিছু অংশ দখল করে নেয় ইতালি | অবশেষে হিটলার পোল্যান্ডের কাছে ডানজিগ ও পোলিশ করিডর দাবি করলেন | যাতে এই অঞ্চলে সৈন্য সমাবেশ করতে পারেন | পোল্যান্ডের সরকার এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে | পোল্যান্ডের ধারণা ছিল হিটলারের নেতৃত্বে জার্মানি পোল্যান্ড আক্রমণ করলে ইউরোপের অন্যান্য দেশ পোল্যান্ডের পক্ষ নেবে | এবং ইউরোপের সম্মিলিত বাহিনীর কাছে হিটলার পরাজিত হবে | কিন্তু 1939 সালের 1লা সেপ্টেম্বর জার্মান বাহিনী পোল্যান্ড আক্রমণ করলে মাত্র 15দিনের মাথায় পোল্যান্ড পরাজিত হয় এবং জার্মানি পোল্যান্ড অধিকার করে | পোল্যান্ডের পর হিটলার দখল করলেন নরওয়ে ও ডেনমার্ক | নরওয়েতে বিরাট সংখ্যক ব্রিটিশ সেনা মোতায়েন ছিল | এই আক্রমণের ফলে অধিকাংশ ব্রিটিশ সেনা নিহত হয় | এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চেম্বারলিন পদত্যাগ করলেন এবং নতুন প্রধানমন্ত্রী হলেন চার্চিল | এরপর হিটলার ফ্রান্স আক্রমণের পরিকল্পনা করেন | ফ্রান্স নিজ সুরক্ষার জন্য. জার্মান সীমান্তে দূর্ভেদ্য ব্যূহ সৃষ্টি করেছিল | যাকে বলা হতো ম্যাজিনো | বেলজিয়াম আক্রমণ করে সেই দেশের মধ্য দিয়ে ফ্রান্সের সীমান্তে উপস্থিত হলো জার্মান বাহিনী | সোঁদায় তুমুল যুদ্ধের পর ফরাসি বাহিনী পরাজিত হয় | ফরাসিদের এই বিপর্যয়ের সুবিধা নেওয়ার জন্য ইতালি নিজেকে জার্মানির মিত্র হিসাবে ঘোষণা করে যুদ্ধে যোগ দেয় | এই ভাবে সমগ্র ইউরোপ -আফ্রিকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ আগুন | আজ এ পর্যন্তই থাক পরবর্তী আলোচনায় আরও নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাবে |

No comments:

Post a Comment