Sunday, 29 November 2015

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে যে সব মহান বিপ্লবীদের নাম যুক্ত তাদের মধ্যে একজন হলেন চন্দ্রশেখর আজাদ. | কাকোরি অভিযান, এলাহাবাদের সশস্ত্র সংঘর্ষ ইত্যাদি নানা বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যার নাম সক্রিয় ভাবে যুক্ত ছিল তিনি হলেন চন্দ্রশেখর আজাদ |
মহান বিপ্লবী চন্দ্রশেখর আজাদের জন্ম হয়েছিল মধ্যপ্রদেশের. ঝাবুয়া জেলার ধাওড়া গ্রামে | জন্ম তারিখ 1906 সালের 23 শে জুলাই | বাবার নাম পন্ডিত সীতারাম তিওয়ারি | পন্ডিত বংশের সন্তান ছিলেন চন্দ্রশেখর | তাঁকে প্রথম জীবনে টোলে পড়াশোনা করতে হয়েছিল | তাঁর পিতার ইচ্ছা ছিল ছেলে বিখ্যাত সংস্কৃত পন্ডিত হয়ে উঠবেন | মাত্র 15 বছর বয়সে বেনারস সেন্ট্রাল কলেজের. ছাত্র হিসেবে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন | তখন তাঁকে প্রথম গ্রেপ্তার বরণ করতে হয় | আদালতের আত্মপরিচয়ে তিনি নিজেকে আজাদ বা স্বাধীন বলে পরিচিত করেছিলেন | তখন থেকেই এই নামটি তার সাথে জুড়ে গেছে | তাঁকে পনেরো বার বেত্রাঘাতের সাজা দেওয়া হয় |
এই সময় পর্যন্ত চন্দ্রশেখর ছিলেন মহাত্মা গান্ধীর একান্ত অনুগামী | ব্রিটিশদের হাত নিগৃহীত হবার পর এই পন্থা ত্যাগ করে সশস্ত্র বিপ্লবী হয়ে ওঠেন. | যোগাযোগ হয় বেনারসের বিপ্লবী রাজেন্দ্রলাল লাহিড়ী এবং শচীন্দ্রনাথ বক্সির সঙ্গে | তিনি এই দুই বিপ্লবীর সংস্পর্শে এসে এক নতুন সংগঠনের সদস্য হয়ে ওঠেন |
বিপ্লবী রামপ্রসাদ বিসমিলের নেতৃত্বে কয়েকটি রাজনৈতিক ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করেন চন্দ্রশেখর | 1924 সালে দিল্লিতে হিন্দুস্তান সমাজবাদী প্রজাতন্ত্র সংঘের বৈঠকে যোগ দেন আজাদ | এই সভায় সর্বসম্মতিক্রমে তাঁকে কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে নির্বাচিত করা হয় | এরপর এল সেই ঐতিহাসিক 9ই আগষ্ট 1925 | কাকোরি ট্রেন ডাকাতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন আজাদ, এই ঘটনার পর গ্রেপ্তারি এড়ানোর জন্য অনেক দিন তাঁকে আত্মগোপন করে থাকতে হয় | 1928 সালের 14ই ডিসেম্বর ভগত সিং, রাজগুরু এবং জয়গোপালের সঙ্গে পুলিশ সুপারিনটেন্ডেট মিস্টার স্কট কে হত্যা করতে গিয়ে ভুল করে ডিএসপি স্যান্ডর্স কে হত্যা করেন | এবারেও তাঁকে দীর্ঘ দিন আত্মগোপন করে থাকতে হয় |
চন্দ্রশেখর ছিলেন অত্যন্ত তৎপর কর্মী | সবসময়ই কোনো না কোনো অভিযানে অংশ নেওয়ার জন্য ছটফট করতেন | তাই তাঁর সহকর্মী রা তাঁকে " কুইক সিলভার " নাম দিয়েছিল | 1931 সালের 27 শে ফেব্রুয়ারি সকাল নটায় চন্দ্রশেখর আজাদ এলাহাবাদের আলফ্রেড পার্কের উত্তরদিকে গাছের ছায়ায় বসে সঙ্গী সুখদেব রাজের সঙ্গে কথা বলছিলেন | সেই সময় এক বিশ্বাসঘাতকের জন্য ব্রিটিশ পুলিশ বাহিনী খবর পেয়ে তাঁকে ঘিরে ফেলে সেখানে ব্রিটিশ পুলিশের বিরূ্দ্ধে মরনপন যুদ্ধ চালিয়ে যান আজাদ | শেষ পর্যন্ত পালানো অসম্ভব বিবেচনা করে নিজের পিস্তলের শেষ গুলি নিজের কপালের একপাশে ধরে চালালেন | নিভে গেল তাঁর প্রাণ প্রদীপ | ব্রিটিশ শাসকের হাতে ধরা পড়ব না এমনই প্রতিঞ্গা ছিল আজাদের | শহিদ চন্দ্রশেখর বারবার বলতেন " আমার মাউজার শত্রুকে সুযোগ দেবে না আমাকে গ্রেপ্তার করার " | এই শপথ তিনি রেখেছিলেন | তাই আত্মসমর্পণ নয় আত্মবিসর্জনকেই বেছে নিয়েছিলেন |

No comments:

Post a Comment