Monday 5 October 2015



১৮৯৩ সালের আজকের দিনে ঢাকার কাছে শ্যাওড়াতলী গ্রামে জন্মগ্রহণ
করেন মেঘনাদ সাহা ।তাঁর পিতা জগন্নাথ সাহা ছিলেন একজন মুদি দোকানি । প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টির দিনে জন্ম গ্রহণ করায় ঠাকুমা তাঁর নাম রেখেছিলেন মেঘনাথ । পরবর্তীতে স্কুলে যাবার পর তাঁর নাম হয় মেঘনাথ । মেঘনাদ ছিলেন আট  ভাইবোনের  মধ্যে পিতা মাতার পঞ্চম সন্তান ।১৯০৯ সালে সারা পূর্ববাংলায়  প্রথম স্থান অধিকার করে মেঘনাদ সাহা এন্ট্রাস পাস করেন । ১৯১১ সালে  পুর্ব বাংলায় প্রথম এবং কলকাতাসহ  সমগ্র বাংলায় তৃতীয় স্থান নিয়ে মেঘনাদ সাহা উচ্চমাধ্যমিক  পাশ করেন । এরপর বি এস সিতে ভর্তি  হন কলকাতা প্রেসিডেন্টি কলেজে । এই সময় প্রেসিডেন্টি কলেজে পদার্থবিঞগান পড়াতেন স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু । প্রেসিডেন্টি কলেজে তাঁর সহপাঠিদের মধ্যে ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু , প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ( এক বছরের সিনিয়র ) ।কলেজে পড়ার সময় মেঘনাদ কে প্রচন্ড ভাবে অপমানিত হতে হয়েছিল নিচু জাতির হওয়ার জন্য । এই জন্যই হোস্টেলে থাকা তাঁর পক্ষে দুর্বিসহ হয়ে ওঠে এবং তিনি হোস্টেল ত্যাগ করে মেসে থাকতে শুরু করেন । এই সময়ই গণিতে অনার্স সহ বি এ পাশ করেন মেঘনাদ সাহা ।এই পরীক্ষায় প্রথম হন সত্যেন্দ্রনাথ বসু আর দিতীয় হন মেঘনাদ । ১৯১৫ সালে এম এস সি পাশ করেন মেঘনাদ সাহা ।মেঘনাদ সাহা পরমাণু বিজ্ঞান, আয়ন মণ্ডল, পঞ্জিকা সংস্কার, বন্যা প্রতিরোধ ও নদী পরিকল্পনা বিষয়ে গবেষণা করেছিলেন । তাপীয় আয়নবাদ  সংক্রান্ত তত্ত্ব উদ্ভাবন করে জ্যোতিপর্দার্থবিজ্ঞানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন । ১৯৫৬ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে প্ল্যানিং কমিটির অফিসে যাবার পথে হার্ট অ্যাটাকে মারা গিয়েছিলেন মেঘনাদ সাহা।

Thursday 1 October 2015

পরিবার গঠন ও বিবাহের ইতিহাস

বিশ্বজগতে একমাত্র মানুষেরই যৌন ক্ষুদা সীমিত নয় । বিশ্বের প্রতিটি জীবই সারাবছরের একটি নির্দিষ্ট ঋতুতে যৌন মিলনে মিলিত হয় এবং সন্তান উৎপাদন  করে। কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে বিষয়ই আলাদা । মানুষ বছরের যে কোনো সময়ে যৌন মিলনে মিলিত হতে পারে এবং সন্তান উৎপাদন করতে পারে ।  এই কারণেই মানুষের মধ্যে স্ত্রী -পুরুষকে পরস্পরের সান্নিধ্যে থাকতে দেখা যায় । আর এই  প্রবৃত্তি থেকেই মানুষের মধ্যে পরিবারের উদ্ভব হয়েছে । অবশ্য পরিবার গঠন করে স্ত্রী পুরুষের একত্রে থাকার কারণও আছে । সেটা হচ্ছে বায়োলজিক্যাল কারন । প্রাণিজগৎ এ মানুষের মধ্যে শিশু কে লালন পালন করে বড় করে তুলতে মানুষের অনেকটা সময় লাগে । যেটা ওন্যান্য জীবেদের ক্ষেত্রে লাগে না । এই জন্যই স্ত্রী পুরুষকে একত্রে থাকতে হয় । যদি ধরুন পুরুষ স্বামী সন্তানের জন্ম দিয়ে চলে যায় তাহলে স্ত্রী এবং শিশুকে  চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পরতে হয় । বস্তুত আদিম যুগে নারীকে সবসময়ই পুরুষের উপর নির্ভরশীল থাকতে হত । যুগে যুগে যদিও নারী নির্যাতিত হয়েছে , তবুও সে তার ভালোবাসা দিয়ে পুরুষকে সে তার সান্নিধ্যে রেখেছে । সুতরাং দেখা যাচ্ছে মনুষ্য জগতে পরিবারের উদ্ভব ঘটেছে জীব জনিত কারণে । বিবাহের দারা পরিবারএর মধ্যে নারী-পুরুষের সম্পর্ককে  সামাজিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে অনেক পরে এবং এক বিশেষ প্রয়োজনে । বস্তুত আদিম মানুষকে খাদ্যের সন্ধানে বহু দূরে যেতে হত । ফলে অনেক ক্ষেত্রে তাকে নিজ গৃহ থেকে দূরে অন্যত্র থাকতে হত । এই সময় তার স্ত্রী বাড়িতে একা থাকত ।  এবং তার একা থাকার সুযোগে অনেক সময় অন্য পুরুষ জোর পূর্বক তাকে হরণ করত ।এরপর নারীটির পুরুষ যখন বাড়ি আসত তখনই উক্ত অন্য পুরুষের সাথে তার রক্ত ক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হত ।মূলত এরুপ রক্তপাত পরিহারের জন্যই মনুষ্য সমাজে বিবাহের মাধ্যমে নারী-পুরুষের সম্পর্ককে সামাজিক স্বকৃতি দেওয়া হয় । প্রখ্যাত নৃতত্ববিদ ওয়েস্টার মার্ক বলেন, পরিবার গঠন করে স্ত্রী পুরুষের একত্রে বাস করা থেকেই বিবাহ প্রথার উদ্ভব হয়েছে , বিবাহ প্রথা থেকে পরিবারের সূচনা হয়নি ।
সূত্র ;- ভারতের বিবাহের ইতিহাস

ডঃ নীলরতন সরকারের জন্মদিন

আজ ডঃ নীলরতন সরকারের জন্মদিন । ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ১ অক্টোবর চব্বিশ পরগণার নেতড়াতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন ।

নেহেরু পরিবারের গান্ধী পরিবার হওয়ার ইতিহাস

1912 সালের 12. ই সেপ্টেম্বর বোম্বাই এর এক পা র্সি পরিবার জন্ম গ্রহণ করেন ফিরোজ জাহাঙ্গীর ...যার সঙ্গে ভারতের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বিবাহ হয়েছিল

এলাহাবাদে ফিরোজের সঙ্গে প্রথম ইন্দিরা গান্ধীর দেখা হয় ...সেখানে ইন্দিরা এবং তাঁর মা কমলার সঙ্গে ফিরোজের ভালো স ম্প র্ক গড়ে ওঠে ....তখন ইন্দিরার বয়স ছিল মাত্র 16 বছর ....ফিরোজ ইন্দিরা কে প্রেম নিবেদন করেন ..কিন্তু কমলা গান্ধী সেই প্রেম নিবেদন খারিজ করে দেন ....1936 সালে কমলা গান্ধী মারা যাবার পর ইন্দিরা একা হয়ে পড়ে ....জহরলাল তখন ইন্দিরা কে বিদেশে পড়াশোনা জন্য পাঠিয়ে দেন ...কিন্তু বিদেশ থেকে জহরলালের কাছে একের পর এক চিঠি আসতে থাকে তাতে লেখা বাবা আমি ফিরোজ কে ভালবাসি .....জহরলাল এতে কিছুটা হতাশ হন ...কারণ পাত্র একজন পারসিক .....আর এই বিবাহ হলে খবরের কাগজে নানা কথা লেখা হতে পারে ...তাই কোনো উপায় না দেখে জহরলাল মহা ত্মা গান্ধীর কাছে যান .....গান্ধীজি তখন সব কথা শুনে ফিরোজ কে দত্তক নেন নিজের পুত্র হিসাবে ....যার ফলস্বরূপ ফিরোজ জাহাঙ্গীর হয়ে যায় ফিরোজ গান্ধী .তারপর ইন্দিরা গান্ধীর বিবাহ হয় ফিরোজ গান্ধীর সঙ্গে .....সেই সূত্র থেকেই নেহেরু পরিবার গান্ধী পরিবার হিসাবে পরিচিতি পায়
সামনে আগষ্ট মাস তারপরেই সেপ্টেম্বর মাস আর সেপ্টেম্বর মাসের পাঁচ তারিখে কোন দিবস পালিত হয় এটা নিশ্চয় জানেন ...হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন শিক্ষক দিবস |.......সর্বপল্
লী রাধাকৃষ্ণাণের জন্মদিন কে ভারতবর্ষে শিক্ষক দিবস হিসাবে মানা হয় |

1888সালের. 5 ই সেপ্টেম্বর মাদ্রাজ শহরের (ব র্ত মান নাম চেন্নাই) কাছাকাছি তিরুতানি নামের একটি ছোট্ট শহরে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন | রাধাকৃষ্ণাণের জীবনের প্রথম আট বছর কেটেছিল তিরুতানি শহরে | এখানেই তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন | এরপর তিনি তিরুপতি শহরে চলে আসেন | 1896-1900 খি: পর্যন্ত ক্রিশ্চান মিশনারি বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন তিনি ..এরপর 1900 খি: ভেলোর কলেজে ভর্তি হন ...এখানে চার বছর পড়াশোনা করে চলে আসেন তামিল সভ্যতার. কেন্দ্র মাদ্রাজ শহরে ..1904-1908 খি: পর্যন্ত তিনি মাদ্রাজ ক্রিশ্চান কলেজে একজন কৃতি
ছাত্র ছিলেন ....রাধাকৃষ্ণাণের প্রথম জীবনে দ র্শন
শাস্রের প্রতি কোনো রুপ আগ্রহ ছিল না ....কিন্তু একদিন তাঁর সদ্য স্নাতক হওয়া ভাই নিজের দ র্শ নের বইগুলি তাঁকে পড়তে দিয়েছিলেন ...সে দিন সারারাত ধরে তিনি মনোযোগ সহকারে বইগুলি পড়েছিলেন ...এভাবেই তাঁর ভাবনার জগৎ এ অদ্ভুত এক পরিবর্তন আসে ..আর সেই থেকেই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি দ র্শ ন শাস্রের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছিলেন ....মাদ্রাজ ক্রিশ্চান কলেজ থেকে বি.এ. পরীক্ষাতে তিনি প্রথম হয়ে পাশ করেন ...
মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.এ পরীক্ষা তে অন্যান্য
উত্তর পত্রের সঙ্গে একটি মৌলিক প্রবন্ধ রচনার বিধান ছিল ..সেখানে রাধাকৃষ্ণণ Ethics of the Vedanta নামে একটি অসাধারণ মৌলিক প্রবন্ধ রচনা করেছিলেন ....পরীক্ষক হগ সাহেব তাঁর এই প্রবন্ধ পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন ...এই মৌলিক প্রবন্ধ টি পরবর্তীতে 1908 সালে মাদ্রাজ বিশবিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হয় ...তখন বইটির নাম হয়েছিল. The Ethics of the Vedanta and its Metaphysical Analysis |…………1909 সালে রাধাকৃষ্ণণ মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক নিযুক্ত হন ...তিনি ছাত্র ছাত্রী দের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় ছিলেন ...তাঁর সুন্দর বাচনভঙ্গি ছাত্র ছাত্রী দের মন্ত্রমুগ্ধ করত ....শিক্ষা ক্ষে ত্রে অসামান্য কৃতিত্বের জন্য 1911 সালে তিনি লরিয়েট ইন টিচিং উপাধি লাভ করেন ......সাধীন ভারতবর্ষের তিনি প্রথম উপ রাষ্ট্রপতি ছিলেন এবং পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন....
1975 সালের জানুয়ারি মাসে ইউরিমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে নার্সিহোমে ভ র্তি হন ...বেশ কিছুদিন সেখানে থাকার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন .....কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই আবার গুরুতর অসুস্থ হন এবং তাঁকে আবার নার্সিহোমে ভ র্তি করা হয়...নার্সিহোমে থাকাকালীন তিনি টেম্পলটন পুরস্কার পান ...এর আগে তিনি মাদার টেরেসা উপাধি পেয়েছিলেন .....

অবশেষে 1975 সালের 16ই এপ্রিল রাত্রি বারোটা পঁয়তাল্লিশ মিনিটে নার্সিং হোমে তিনি শেষ নিঃশাস ত্যাগ করেন ... মৃতুকালে তাঁর বিছানার পাশে হাজির ছিলেন তিন মেয়ে এবং তাঁর পুত্র বিখ্যাত পন্ডিত ড. এস. গোপল....সারা পৃথিবীর সংবাদ পত্রে পরদিন গুরুত্ব সহকারে তাঁর মৃতুর খবর প্রকাশিত হয়

একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি

"একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি " এটি একটি বাংলা দেশাত্মবোধক গান |গানটির রচনা এবং সুর করেন পিতাম্বর দাস মতান্তরে মুকুন্দ দাস |গানটি বাংলার সর্বকনিষ্ঠ বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু সন্মানে রচিত হয়েছিল | ক্ষুদিরাম ভারত থেকে
ব্রিটিশ শাসন উৎখাত করার জন্য
সশস্ত্র বিপ্লবে অংশ নিয়ে তিন ব্রিটিশ কে হত্যা করেছিলেন আর সে জন্য 1908 সালের 11ই আগষ্ট ব্রিটিশ সরকার তাঁর ফাঁসি দেয় ...1966 সালে মুক্তি পাওয়া সুভাষচন্দ্র ছবিতে এই গানটি ব্যবহার করা হয়েছিল ...তখন এই গানটি গেয়েছিলেন লতা মাঙ্গেশকর|.....

সম্পূর্ণ. গানটি হল ---

একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি।
হাসি হাসি পরব ফাঁসি দেখবে
ভারতবাসী।
কলের বোমা তৈরি করে
দাঁড়িয়ে ছিলেম রাস্তার ধারে
মাগো,
বড়লাটকে মারতে গিয়ে
মারলাম আরেক ইংলন্ডবাসী।
হাতে যদি থাকতো ছোরা
তোর ক্ষুদি কি পড়তো ধরা মাগো
রক্ত-মাংসে এক করিতাম
দেখতো জগতবাসী
শনিবার বেলা দশটার পরে
জজকোর্টেতে লোক না ধরে মাগো
হল অভিরামের দ্বীপ চালান মা
ক্ষুদিরামের ফাঁসি
বারো লক্ষ তেত্রিশ কোটি
রইলো মা তোর বেটা বেটি মাগো
তাদের নিয়ে ঘর করিস মা
ওদের করিস দাসী
দশ মাস দশদিন পরে
জন্ম নেব মাসির ঘরে মাগো
তখন যদি না চিনতে পারিস
দেখবি গলায় ফাঁসি।

কলকাতা মহানগরী

1690 সালের 24 শে আগষ্ট জব চার্নক তৎকালীন বাংলার নবাব ইব্রাহিম খানের কাছে অনুমতি নিয়ে কলকাতা প্রতিষ্ঠা করেন | তবে সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট এই প্রতিষ্ঠা দিবস বাতিল বলে ঘোষণা করেছে | কলকাতা বাংলার ষষ্ঠ রাজধানী :- প্রথম -গৌড় ( মালদহ ), দিতীয় - নদিয়া , তৃতীয় - রাজমহল, চতুর্থ -ঢাকা, পঞ্চম - মুর্শিদাবাদ | মুর্শিদাবাদ থেকে বাংলার রাজধানী কলকাতায় স্থানান্তরিত হয় 1772 সালে | ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরিত হয় 1911 সালে | 1756 সালে সিরাজ উদ দৌললা কলকাতা আক্রমণ করেন এবং কলকাতার নাম এরপরে হয় আলীনগর
কলকাতায় পাতাল রেল চালু হয় 1984 সালের 24 অক্টোবর | কলকাতার রাজভবন তৈরি হয়েছিল 1799 সালে লর্ড ওয়েলেসলির আমলে | এটি লর্ড কার্জনের পৈতৃক বাড়ি কেডল স্টোন হলের অনুকরণে তৈরি | কলকাতা হাইকোর্ট বেলজিয়ামের Ypres এ অবস্থিত বিখ্যাত টাউন হলের আদলে নির্মিত হয় 1872 এ | ভারতীয় যাদুঘর নির্মিত হয় 1875 সালে ইতালীয় নির্মাণ কৌশলে | শহীদ মিনার তৈরি হয় 1828 সালে | এর উচ্চতা 48 মিটার | ভিত মিশরীয় স্তম্ভ, সিড়ি এবং গম্বুজ তুর্কি
স্থাপত্যরীতিতে তৈরি | এটি অক্টারলোনির নেপল জয়ের স্মারক |
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল তৈরি স মাপ্ত হয় 1921 এ | ইটালির রেনেসাঁস ও মোগল রীতিতে তৈরি এটি | আলিপুর চিড়িয়াখানা তৈরি করেন রাজা রাজেন্দ্র মল্লিক. 1876 সালে | কলকাতা রেস কোর্স নির্মাণ করা হয় 1819 এ | কলকাতার প্রাচীন তম গির্জা চিনা বাজারের আর্মেনিয় গির্জা স্থাপিত হয় 1724 এ |

মাত্র তিন খানা গ্রাম নিয়ে কলকাতা শহরের পত্তন. হয় | সেই তিনটি গ্রাম হল - সুতানুটি , কলকাতা ও গোবিন্দপুর | ইংরেজ দের হাতে যাবার আগে কলকাতায় জমিদারি রাজত্ব ছিল | সার্বণ চৌধুরীর সম্পত্তি ছিল কলকাতা ইংরেজ দের হাতে যাওয়ার আগে | সার্বণ চৌধুরীর কাছ থেকে ইংরেজরা সুতানটি, কলকাতা ও গোবিন্দপুর কেনে |
কলকাতা মহানগরীর তদারকির দায়িত্বে কলকাতা করপোরেশন বা পৌরসভা |
1847 সালে কলকাতা করপোরেশন. প্রতিষ্ঠিত হয় | কলকাতা করপোরেশনের প্রথম বাঙালি মেয়র ছিলেন - দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন. দাশ | কলকাতায় প্রতিষ্টিত প্রথম কলেজ হল ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ, 1800. সালে প্রতিষ্টিত. হয় | কলকাতার সাধারণ মানুষ 1817 সালে প্রতিষ্টিত করেন হিন্দু কলেজ | কলেজটির বর্তমান নাম প্রেসিডেন্সি কলেজ | | কলকাতা বিশ্ব বিদ্যালয় প্রতিষ্টিত হয় 1857 সালের 24 শে জানুয়ারি | 1890 সালে স্যার গুরুদাস. বন্দোপাধ্যায়. প্রথম বাঙালি ভাইস চ্যান্সেলর হন কলকাতা বিশবিদ্যালয়ের | কলকাতা বিশবিদ্যালয়ের থেকে প্রথম গ্র্যাজুয়েট
হন. বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও যদুনাথ বসু যুগ্ম ভাবে | কলকাতা বিশবিদ্যালয় থেকে মহিলাদের মধ্যে প্রথম গ্র্যাজুয়েট হন চন্দ্রমুখী বসু এবং কাদম্বিনী গাঙ্গুলি|
কলকাতায় প্রথম বিদ্যুৎ এর আলো জ্বলে 1899 সালে | 1882 সালে ঘোড়ায় টানা ট্রাম এবং 1900 সালে বৈদ্যুতিক ট্রাম চালু হয় কলকাতায় | 1797 সাল থেকে কলকাতার টাঁকশাল টাকা তৈরি করতে শুরু করে | কলকাতায় প্রথম টেলিফোন চালু হয় 1882 সালে |
কলকাতা রাইটার্স বিল্ডিং তৈরি হয় 1780 তে |

ফোর্ট উইলিয়াম দূর্গ নির্মাণের কাজ শুরু হয় 1858 সালে আর শেষ হয় 1873 এ | কলকাতা হাইকোর্ট প্রথমে 1772 সালে স্থাপিত হয় | তখন হাইকোর্টের বাড়ি ছিল না | কোর্ট বসত টাউন হলে | তখন এই কোর্ট ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ছিল | বর্তমান. হাইকোর্ট 1872 সালে রাজভবনের পশ্চিম দিকে
স্থাপিত হয় | আর কলকাতার রাজভবন তৈরি হয়েছিল ক্যাপ্টেন ওয়াটসের নক্সা অনুসারে | রাজভবন তৈরির কাজ শুরু হয় 1791 সালে আর শেষ হয় 1803 খি:
1972 সালের নভেম্বর মাসে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কলকাতার পাতাল রেলের শিলান্যাস. করেছিলেন
ভারতের সর্বপ্রথম. পাতাল রেলের কাজ শুরু হয় কলকাতায় 1984 সালের 24 শে অক্টোবর
| এসপ্লানেড. থেকে ভবানীপুর পর্যন্ত

বাদকুল্লার জমিদার গগন চন্দ্র বিশ্বাস

1849 সালের নদীয়া জেলার সদর দপ্তর. কৃষ্ণনগরের সন্নিকটে মাধবপুর নামক গ্রামের এক জমিদার বংশে গগন চন্দ্র বিশ্বাস জন্ম গ্রহণ করেন | তাঁর পিতা শ্রীমন্ত বিশ্বাস সংস্কৃত , আরবি ও ফরাসি ভাষায় শিক্ষিত সজ্জন ব্যক্তি ছিলেন |

বাদকুল্লার প্রতিটি মানুষ তাঁর নাম জানেন | বাদকুল্লার উন্নয়নে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য | গগন চন্দ্র বিশ্বাস একজন ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন | তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে এফ.এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষায় নির্বাচিত হয়ে শিবপুর বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ বাংলার সর্ব প্রথম ব্যাচে প্রথম বিভাগে দিতীয় স্থান অধিকার করে ব্যাচেলর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন |
গগন চন্দ্র বিশ্বাসের কর্মজীবনের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা এখন আপনাদের সামনে তুলে ধরছি | গগন চন্দ্র বিশ্বাসের ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি কৃষ্ণনগরে জলঙ্গী নদীর উপর রেলের ব্রীজ নির্মাণে 9 লক্ষ টাকার টেন্ডার পান | ব্রীজ নির্মাণ কালে তিনি যখন তার টেবিলের উপর ব্রীজের নকশার কাজ করছিলেন, সেই সময় সরকারের তরফে আসা এক উচ্চপদস্থ বৃটিশ সাহেব তার টেবিলের উপর জুতো সমেত পা তুলে দেয় | তখন তিনি সাহেবের আচরণে অতিশয় অপমান বোধ করায় প্রচন্ড ক্রুদ্ধ হয়ে তাহার হাতে থাকা স্কেল দিয়ে সাহেবের পায়ে সজোরে আঘাত করেন | সাহেব চটে গিয়ে প্রতিশোধ নেবার জন্য ষড়যন্ত্র করে ব্রীজের বিশেষ ক্ষতিসাধন করে | পরে ব্রীজে ফাটল দেখা দেয় | তিনি অপরিসীম ক্ষতি সীকার করে তৈরী ব্রীজ ভেঙে নিজ খরচায় পুনরায় নূতন ব্রীজ তৈরী করে দেন | এই ক্ষতি পূরন করতে গিয়ে তার কলিকাতার বৃহৎ বাড়ী, জলপাইগুড়ির চা বাগান ও নদীয়ার কিছু সম্পত্তি বিক্রি করতে হয় | প্রখ্যাত সাংবাদিক শিশির কুমার ঘোষ তাঁর অমৃতবাজার পত্রিকায় এই ঘটনা উল্লেখ করে গগন চন্দ্র বাবুর তেজোদীপ্ত. চারিত্রিক দৃঢ়তার ভূয়সী প্রশংসা করেন |

এবার আসি বাদকুল্লার কথায়. |
গগন চন্দ্র বাবু বাদকুল্লায় এসে বাদকুল্লার জমিদারি ক্রয় করেন | বাদকুল্লায় কিভাবে আদর্শ জনবসতি গড়ে তোলা যায় তার সকল প্রয়াস তিনি করেন | বাদকুল্লার উন্নতি সাধনে তিনি রেল কোম্পানিকে 500 বিঘার মত জমি দান করে সেই জমিতে বাদকুল্লার রেল স্টেশন তৈরী করেন | ইহার যাবতীয় ব্যয় তিনি গ্রহণ করেন | স্থানীয় জনগণের সারথে তিনি বাদকুল্লায় একটি হাট ও বাজার তৈরী করেন | এখন তাহা "গগন বাবুর বাজার " নামে পরিচিত | বাদকুল্লার ভিতর দিয়ে অঞ্জনা নদী প্রবাহিত হওয়ায় লোকজনের সড়ক পথে নদী পারাপার করতে অসুবিধা হত | তিনি নিজ পরিকল্পনায় নিজ খরচে বাদকুল্লা বাজারের পাশে গাংনীতে, আড়বান্দীতে ও হেমায়েৎপুরে অঞ্জনা নদীর উপর তিনখানা ব্রীজ তৈরী করে দেন | তিনি বাদকুল্লায় নিরক্ষরতা দূরীকরণের জন্য নিজ ব্যয়ে একটি পাঁকা বাড়ি তৈরী করেন. এবং সেই বাড়িতেই প্রথম একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় তৈরী করেন | পরবর্তীতে এই ভবনে বাদকুল্লার প্রথম লাইব্রেরী স্থাপন করা | 1952 সালে বাদকুল্লার অপর দুই কৃতি সন্তান ফণীভূষণ মন্ডল, রেবতীকান্ত রায় এবং তৎকালীন বেশ কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তি ওই ভবনে বাদকুল্লা ইউনাইটেড ক্লাব. স্থাপন করেন. নানা সামাজিক কাজকর্ম করার জন্য |

এতদসব সামাজিক কাজকর্ম করার পরও গগন চন্দ্র বাবু কিন্তু যথাযথ মর্যাদা পাননি | 1935 তিনি মারা যান |

তথ্য সূত্র -- সাধীনতা সংগ্রামী মাহিষ্য প্রবাদ পুরুষ গগন চন্দ্র বিশ্বাস পুস্তক

কৃষ্ণনগর কলেজের ইতিহাস

কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের
অন্তর্গত প্রথম সারীর একটি কলেজ হল কৃষ্ণনগর মহাবিদ্যালয় | এই কলেজের পরোতে পেরোতে ইতিহাস জড়িয়ে আছে | এই কলেজটির বয়স প্রায়. 170 বছর | কৃষ্ণনগর মহাবিদ্যালয়ের. শুভ উদ্ভোধন ঘটে 1845 সালের 28 নভেম্বর | এখানকার হাতার পাড়ার এক ভাড়া বাড়িতে | তৎকালীন বড়োলার্ট লর্ড হার্ডিঞ্জ 1846 সালের 1 জানুয়ারি এই কলেজের অনুমোদন দেন | এর কিছু সময় পর নদীয়ার মহারাজা শ্রীশচন্দ্র রায় এবং মুর্শিদাবাদের কাশিমবাজারের মহারানি স্বর্ণময়ী কলেজের শতাধিক বিঘা জমি দান করলে স্থানীয় শিক্ষাহিতৈষী ব্যক্তিবর্গের আর্থিক সহযোগিতায় নির্মিত বর্তমান প্রাসাদোপম ভবনে ভাড়া বাড়ি ছেড়ে স্থায়ী ভাবে কলেজ উঠে আসে 1856 সালের 1 জুন |
এই মহাবিদ্যালয়ের প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন বিশিষ্ট শেক্সপিয়ার বিশেষজ্ঞ ক্যাপ্টেন ডি.এল. রিচার্ডসন | এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে মি: রকফোর্ট , স্যার রোপার লেথব্রিজ , রায় বাহাদুর জ্যোতিভূষণ ভাদুড়ী, সতীশ চন্দ্র দে, আর. এন. গিলক্রিষ্ট. প্রমুখ যশস্বি শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গ অধ্যক্ষের পদ অলংকৃত করেছেন |
এখানকার খাতিনামা অধ্যাপক দের মধ্যে বাবু রামতনু লাহিড়ী , মদনমোহন তর্কালঙ্কার , চিন্তাহরণ চক্রবর্তী , সুবোধ. চন্দ্র সেনগুপ্ত, আব্দুল হাই, প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য |
এই কলেজের বিখ্যাত ছাত্র দের মধ্যে রয়েছেন কবি ও নাট্যকার দিজেন্দ্রলাল রায়, চারণকবি ও সাংবাদিক বিজয়লাল চট্টোপাধ্যায়, ভূতত্ত্ববিদ ও টাটা লৌহ ইস্পাত কারখানার রুপকার প্রমথনাথ বসু এবং 2010 সালের মে মাসে এভারেস্ট জয়ী পর্বতরোহী বসন্ত সিংহ রায় প্রমুখ |
1999 সাল থেকে এই কলেজ কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত হয় | 2002 সাল থেকে এখানে দর্শন. ও ভূগোল , 2008 সালে বাংলায়. এবং 2010 সাল থেকে প্রাণিবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর. শ্রেণীর. পঠনপাঠন চালু হয় |

তথ্য সূত্র :- কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজের তথ্য পুস্তিকা 2013-2014

রানাঘাটের নামকরণের ইতিহাস

রানাঘাট নামটি সবাই জানেন | কিন্তু রানাঘাটের এরুপ নামকরণের পশ্চাদে একাধিক যুক্তি পাওয়া যায় | এখন রানাঘাটের এরুপ নামকরণ হওয়ার সেইসব যুক্তি গুলিরই অবতারণা করব |
কেউ কেউ বলেন রানাঘাটের পুরোনো নাম ছিল ব্রহ্মডাঙা | এখানে রনা বা রানা ডাকাতের মূল ঘাঁটি ছিল | তার ভয়ে আশেপাশের গ্রামের বাসিন্দারা কাঁপত | চূর্ণী নদীতে তখন বড়ো বড়ো নৌকা চলত | যাত্রী বা পণ্য নিয়ে | তবে রানার ভয়ে সবাই যেত দলবদ্ধ হয়ে | যার ফলে লোকজন ব্রহ্মডাঙা কে আর ব্রহ্মডাঙা বলত না | বলত রানার ডাকাতের ঘাঁটি বা রানার ঘাট | এই ভাবেই ব্রহ্মডাঙা হয়ে গেল রানাঘাট |

আবার অনেকে বলেন "ঘাট" কথাটি হল হাটের পরিবর্তিত রুপ | নদীর তীরে ব্রহ্মডাঙায় বসত বিকিকিনির হাট | সেই হাট থেকেই ঘাট | আরেক দল প ন্ডিত এই মতকে বিশ্বাস করেন না | তাঁরা বলেন কোনও এক রানীর নামকে স্মরণ করেই রানীর ঘাট | তার থেকে রানাঘাট |

রানাঘাটের প্রাচীনত্ব নিয়ে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই | যে বারোটি দীপ নিয়ে প্রাচীন নবদীপ রাজ্যে গঠিত হয়েছিল তার মধ্যদীপে রানাঘাটের অবস্থান ছিল | 1962 সালে রানাঘাট মহাকুমা থেকে চাকদহ থানার কিছু মৌজা নিয়ে গঠিত হয় কল্যাণী থানা এবং 1983 সালের 1 লা জানুয়ারি রানাঘাট মহাকুমা থেকে কেটে চাকদহ, কল্যাণী, আর হরিণঘাটাকে বের করে নিয়ে গঠিত হয় কল্যাণী থানা |

রানাঘাটে আগে একাধিক নদী ছিল কিন্তু সেগুলির সবই আজ লুপ্ত প্রায়.
বহমান নদী গুলি হল গঙ্গা, চূর্ণী , ইছামতি আর লুপ্ত নদী গুলির মধ্যে রয়েছে বারকো হাঙ্গর অঞ্জনা কঙ্গোনা..

তথ্য সূত্র :- আনন্দবাজার পত্রিকা /এখন নদীয়া 2013

ছবিটি রানাঘাটির পালচৌধুরী বাড়ির শিবমন্দিরের ....

বাদকুল্লা নামের পশ্চাদে জনশ্রুতি

পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার অন্তর্গত একটি অঞ্চল হল বাদকুল্লা | তবে এই অঞ্চলের নাম বাদকুল্লা কেন হল তা নিয়ে একাধিক মত পাওয়া যায় | এখন সেই মতামত গুলিই তুলে ধরছি

কেউ. কেউ মনে করেন একজন পদাতিক সৈন্য একসময় এখানে এসেছিলেন | তিনি যখন কাজ করছিলেন তখন তাঁর টুপি বা কুল্লা টি জোর হাওয়ায় উড়ে যায়. || পরে তিনি তাঁর সেনা ক্যাম্পে এলে তার সহকর্মীরা তাঁর টুপি না থাকার কারণ জিঞগাস করলে তিনি বলেন " কুল্লা বাদ হো যায়েগা " | সেই থেকেই বাদকুল্লার এরুপ নামকরণ হয় বলে কেউ কেউ মনে করেন |

আবার আরেক শ্রেণীর লোক মনে করেন কুল্লা হলো উঁচু ঢিপি | কিন্তু পার্শ্ববর্তী অঞ্চল গুলি অপেক্ষা কৃত উঁচু হলেও বাদকুল্লার ভূমিরুপ একটু নীচু | তাই বাদ হিসাবে পরিচিত | ঢিবির অভাবে এর নাম হয় " বাদকুল্লা " |

অনেক পূর্বে " বাদকুল্লা " লেখা হত. "বাতকুল্লা " হিসাবে | পূর্বে বেত গাছ ভীষণ পরিমাণে ছিল বলে এই অঞ্চল বাদকুল্লা নামে পরিচিত হয় |

বাদকুল্লা ইংরাজী হরফে Bad-kulla. হয় | বলা হয় বাদকুল্লা দস্যু প্রধান এলাকা ছিল | তাই এর নামকরণ. ব্যাড মানে খারাপ অর্থে বাদকুল্লা হয় |

জানা যায় পূর্বে এই এলাকার লোকজন খুব দরিদ্র ছিল | এতো দরিদ্র ছিল যে, বাদকুল্লা মৌজার রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ শূন্যের কোঠায় গিয়ে দাঁড়ায় | তাই গ্রামের নাম হয় ' বাদকুল্লা ' | বানান প্রথম দিকে ছিল ' বাদকুল্য ' | কুল্য শব্দটি ওজন সম্বন্ধীয় | সুলতানি আমলে কুল্য বলতে বোঝাতে 8 দ্রোণ অর্থাৎ. 6 মন 16 সের | বাদকুল্লা থেকে মাঝে মাঝে 1 কুল্য রাজস্ব আদায় হত না | তাই সরকারি দপ্তরে এর নাম হয় বাদকুল্য | বাদকুল্য ক্রমে বাদকুল্যা এবং শেষে ' বাদকুল্লা'য় পরিণত হয় |

বাদকুল্লার এরুপ নামকরণের পিছনে আরও একটি ইতিহাস আছে | কুল্যা শব্দের অর্থ গড়খাই বা কাঁটা খাল | অঞ্জনা যে খাল সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই | আড়বান্দী থেকে পূর্ব দিকে বহুদূর পর্যন্ত কাঁটার প্রয়োজন হয়নি | সাভাবিক জলাভূমি থাকায় অঞ্জনার প্রস্থ এখানে বেড়ে যায় | কাঁটতে হয় না বলে এটুকু বাদ যায় | এই বাদ দিয়ে কুল্যাটা কাঁটা হলো তাই এর নাম দেওয়া হলো বাদকুল্যা, এটা ক্রমে বাদকুল্লায় পরিনত হয় | বাদকুল্লার পাশে কুল্যা যুক্ত আরও দুএকটা গ্রামের নাম পাওয়া যায় | যেমন বড়কুল্যা, দোয়া ( দহ) কুল্যা প্রভৃতি |

বাদকুল্লা নামের পশ্চাদে এই সব জনশ্রুতি পাওয়া যায় ...

Source :- Badkulla Parichai

শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ

শ্রীচৈতন্যের কৃষ্ণ প্রেমের বাণী কে যিনি সারা বিশ্বের দোয়ারে পৌঁছে দিয়েছিলেন তিনি হলেন শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ | যিনি ইসকন মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা আচার্য ছিলেন | শ্রীল প্রভুপাদের পূর্বাশ্রমের নাম ছিল অভয়চরণ দে | তাঁর পিতার নাম ছিল গৌরমোহন দে এবং মাতা ছিলেন
শ্রীমতি রজনী দে উভয়ই কৃষ্ণ ভক্ত ছিলেন | 1896 সালের 1 লা সেপ্টেম্বর অভয়চরণ জন্ম গ্রহণ করেন |

শ্রীল প্রভুপাদের প্রথম জীবনযাপন ছিল আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতোই সাধারণ | তিনি কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজে পড়াশোনা করেন | প্রভুপাদ ড. কার্তিক বোসের ল্যাবরেটরিতে চাকুরী করেছেন এবং এলাহাবাদে গিয়ে ওষুধের উৎপাদন ও বিপণনের. ব্যবসা করার সাথেও যুক্ত ছিলেন | তিনি বিবাহ করেছিলেন এবং স্ত্রী পুত্র নিয়ে সংসার জীবনও পালন করেছেন |

যুবক বয়সেই প্রভুপাদ বৈষ্ণবাচার্য শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত.
সরস্বতী ঠাকুরের কাছ থেকে দীক্ষা গ্রহণ করেছিলেন | তাঁর প্রতি শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্তের নির্দেশ ছিল " তুমি ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে শ্রীচৈতন্য মহাপুরুষের বাণী প্রচার করবে "|

1944 সালে তিনি ইংরেজি ভাষায় " ব্যাক টু গডহেড " পত্রিকা প্রকাশ করেন সম্পূর্ণ. নিজ খরচে | এরপর কৃষ্ণ ভাবনামৃত প্রচারে নিজেকে সম্পূর্ণ. নিয়োজিত করার জন্য সংসার জীবন ত্যাগ করেন | সেই সময় তিনি দিল্লী, ঝাঁসি ও অন্যান্য নানা স্থানে বিভিন্ন উপায়ে ইংরাজি ও হিন্দি ভাষার মাধ্যমে শ্রী চৈতন্য মহা প্রভুর বাণী প্রচার করেন |

1959 সালে সন্যাস নিয়ে ইংরেজি গ্রন্থ রচনা ও পাশ্চাত্যে গিয়ে শ্রী চৈতন্য মহা প্রভুর বাণী প্রচার করেন | এবং অবশেষে 1965 সালে আমেরিকা যাত্রা করেন মাত্র চল্লিশ টাকা সঙ্গে নিয়ে | 69 বৎসর বয়সে একা শ্রীল প্রভুপাদ সারা পৃথিবী জুড়ে শ্রী চৈতন্য মহা প্রভুর ' হরে কৃষ্ণ আন্দোলন ' কে প্রতিষ্ঠিত করেন ' 'আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ' (ইসকন) গঠন করে |

1977 সালের 14ই নভেম্বর শ্রীল প্রভুপাদ মারা যান ......

তিনি বলেছিলেন " জীবন আসে জীবন থেকেই অথাৎ একটি জীবের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তার থেকে আরেকটি জীবনের সৃষ্টি হয় ....
আধুনিক বৈঞগানিক দের উদ্যেশ্যে তাঁর প্রশ্ন ছিল ....

আর আমি তাদের বলি ( বৈঞগানিক. দের) , " রাসায়নিক পদার্থ থেকেই যদি জীবনের উদ্ভব হয়ে থাকে, এবং তোমারা যদি এত উন্নত. বৈঞগানিক হয়ে থাক, তাহলে তোমাদের রসায়নাগারে জৈব রসায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তোমরা কেন জীবন সৃষ্টি করতে পারছ না? " শ্রীল প্রভুপাদ

Source :- Naba-jiban patrika, Jiban ashe jiban thekei and. Wikipedia

নদীয়া জেলা

ভারতবর্ষের 29 টি রাজ্যের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ একটি অন্যতম প্রধান রাজ্য | আর এই রাজ্যের একটি সুপ্রসিদ্ধ জেলা হল নদিয়া | 1787 সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ঘোষিত বাংলার প্রথম জেলা এটি | এই জেলার উত্তরে মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণে উত্তর
24পরগনা , পূর্বে বাংলাদেশ ও পশ্চিমে বর্ধমান অবস্থিত | নদিয়া জেলায় চারটি মহকুমা আছে |মহকুমাগুলি হল কল্যাণী , রানাঘাট, কৃষ্ণনগর, তেহট্ট |এই জেলায় 10 টি পুরসভা , 187 টি গ্রাম পঞ্চায়েত , 17 টি পঞ্চায়েত সমিতি এবং 17 টি ব্লক আছে | লোকসভায় দুটি ( রানাঘাট তপ: জাতি এবং কৃষ্ণনগর ) এবং বিধানসভায় সতেরো টি [ পলাশিপাড়া, নাকাশিপাড়া, করিমপুর, চাপড়া , কৃষ্ণগঞ্জ( তপ: জাতি) , কালীগঞ্জ, নবদীপ, শান্তিপুর, কৃষ্ণনগর উত্তর, কৃষ্ণনগর. দক্ষিণ, রানাঘাট উত্তর - পূর্ব ( তপ:জাতি) , রানাঘাট উত্তর - পশ্চিম, রানাঘাট দক্ষিণ (তপ:) , হরিণঘাটা ( তপ: ) , চাকদহ. , তেহট্ট, কল্যাণী ( তপ:) ) আসন এই জেলার জন্য রয়েছে |

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নদিয়ার কৃষ্ণনগরের মৃৎ শিল্পের. সুনাম রয়েছে | নদিয়ার মৃৎ শিল্পী রাম পাল
1851 সালে লন্ডনে অনুষ্ঠিত ' এগজিবিশন অফ দ্য ওয়ার্কস অব ইন্ডাস্ট্রি অফ অল নেশনস ' প্রদর্শিতে পুরস্কৃত হয়েছিলেন | কৃষ্ণনগরের কিছু মাটির কাজ সংরক্ষিত আছে আমেরিকার পিয়াবডি মিউজিয়ামে |
নদিয়া জেলায় বিভিন্ন সময়ে নানা রকমের উৎসব পালিত হয় এগুলির মধ্যে শান্তিপুরের রাস, কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পূজা, বারোদলের মেলা , বাদকুল্লার দূর্গোৎসব উল্লেখযোগ্য |

এই জেলায় বহু বিখ্যাত ব্যক্তি জন্ম গ্রহণ করেছিলেন তাদের মধ্যে রয়েছেন ফুলিয়ার কৃত্তিবাস ওঝা যিনি কাব্য ছন্দে রামায়ণ লিখেছিলেন , চৈতন্যদেব যিনি গৌড়ীয় বৈষনব ধর্মের প্রবর্তক , কৃষ্ণদেব রায় যার রাজত্বকালে বাংলায় ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ইংরেজদের মিত্রতার জন্য তিনি মহারাজা উপাধি পান, দীনবন্ধু মিত্র, দিজে ন্দ্রলাল রায়, রামতনু লাহিড়ী , রাজশেখর বসু, গোপাল ভাঁড়, গীতগোবিন্দের রচয়িতা জয়দেব, সুচেতা কৃপালনি, বাঘাযতীন এছাড়াও আর অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি নদিয়াতে জন্ম গ্রহণ করেন |
1947 সালে ভারত ভাগের সময় নদিয়ার নাম নবদীপ রাখা হয়েছিল | এই জেলার অন্তর্গত কৃষ্ণনগরের প্রাচীন নাম ছিল - রেউই গ্রাম আর ব্রিটিশ আমলে কল্যাণী নাম ছিল রুজভেল্ট নগর |

পরিবর্তন চাই

দেশ সাধীন হওয়ার পরবর্তী সময়ে শিক্ষার দিক থেকে অনগ্রসর এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া তপশিলী জাতি,উপজাতি এবং পরবর্তী সময়ে নয় এর দশকে মন্ডল. কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে অন্যান্য অনগ্রসর সম্প্রদায়ের জন্যও ভারত সরকার কিছু সুযোগ সুবিধা প্রদান করে | সেই সময়কার সামাজিক অবস্থা বিচার করে দেখলে তাদের বিশেষ সুযোগ সুবিধা দেওয়ার প্রয়োজন ছিল | কিন্তু এখন অথাৎ বর্তমানে সমাজ অনেকটাই পরিবর্তিত হয়েছে | এমনকি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বহু মানুষ এখন প্রসাশনের বিভিন্ন উচ্চপদ থেকে শুরু করে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে সন্মানের সঙ্গে কাজ করে চলেছে |

বর্তমানে দেশের 30 % মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে | এবং এই 30% মানুষের মধ্যে সকল সম্প্রদায়ের লোক রয়েছে | এই অবস্থায় শুধুমাত্র সংখ্যালঘু মানুষ দের বিশেষ সুযোগ সুবিধা দিয়ে বাকি দের অবহেলা করা সরকারের দিচারিতা নয় কী???......কারণ
বর্তমানে শুধুমাত্র যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষরাই দারিদ্র্য এটা নয় অনেক সংখ্যা গরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের মানুষরাও দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করছে | এরুপ অবস্থায় তাহলে কিসের ভিত্তিতে শুরু মাত্র সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়ের মানুষরাই বিশেষ সুযোগ সুবিধা ভোগ করবে? সমাজ এখন বদলেছে এখন যে শ্রেণীর মানুষ জনের কাছে অর্থ আছে তারাই জনসমাজে সন্মান পায় | তাই অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে সরকারের উচিত বিশেষ সুযোগ সুবিধা প্রদানের , জাতি বা সম্প্রদায়গত ভাবে নয়
আর এটাও দেখা উচিত যাতে এই সুযোগ সুবিধা বংশপরম্পরায় চলতে না থাকে | কারণ তাহলে নিন্মশ্রেণীর মানুষ হয়েও একশ্রেণীর মানুষ ধনবান হতে থাকবে আর আরেক শ্রেণীর মানুষ উচ্চ বংশে জন্ম গ্রহণ করার জন্য দারিদ্র্য সীমার নিচে পতিত হবে | তাই সংখ্যা লঘু ভোট ব্যাংকের দিকে না তাকিয়ে সরকারের উচিত এই ব্যবস্থার পরিবর্তন করা | কারন তা নাহলে এর ফলে মানুষে মানুষে ধীরে ধীরে হিংসা বিদ্বেষ বাড়বে .....

এখানে আমি সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়ের বিশেষ সুযোগ সুবিধা বলতে কেন্দ্রীয়. এবং রাজ্যে সরকারি চাকুরীতে তাদের বিশেষ সুযোগ সুবিধা এবং অন্যা ন্য বহু ক্ষে ত্রে সুবিধা দানের কথা বলতে চেয়েছি

গৌতম বুদ্ধ

অনেক দিন পর পোস্ট করছি আশা করি সকলের ভালো লাগবে | আজ গৌতম বুদ্ধ সম্প র্কে দু চার কথা বলব |

বলা হয় নেপালের কপিলাবস্তুুর এক শাক্য বংশে বুদ্ধদেবের জন্ম হয় | তবে তাঁর জন্ম স্থান অবশ্য
কপিলাবস্তুুর নয়, প্রাচীন লুম্বিনী বা বর্তমান রুম্মিনদেঈ গ্রাম তাঁর জন্ম স্থান | তাঁর পিতা শুদ্ধোদন,মা মায়াদেবী | গৌতমের জন্মের সাতদিনের পর তাঁর মা মারা যান | এরপর তিনি তাঁর বিমাতা তথা মাসী প্রজাপতি গৌতমীর কাছে মানুষ হন | কোনো কোনো ঐতিহাসিক মনে করেন গৌতমী মাসির কাছে মানুষ হওয়ায় তাঁর নাম গৌতম | তবে বেশির ভাগ ঐতিহাসিক মনে করেন গৌতম গোত্রে জন্ম হওয়ায় তিনি গৌতম | তাঁর পিতৃ দত্তা নাম ছিল সিদ্ধা র্থ | তাঁর জন্মকালে সকলের ইচছাপূরণ হয়েছিল তাই এরুপ নামকরণ করা হয় বলে মনে করা হয় | শাক্যবংশে জন্ম করেন বলে তাঁকে শাক্যসিংহ বলা হয় | সম্যক
জ্ঞানলাভের পর তাঁর বুদ্ধ নামকরণ হয় |

ছেলেবেলা থেকেই গৌতমের মধ্যে একধরনের উদাসীনতা এবং চিন্তাশীল ভাবধারা লক্ষ্যকরা যায় | গৌতমের এই উদাসীনতা পিতা শুদ্ধোধনকে চিন্তিত করে তোলে | তাই সংসারের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য তিনি গৌতম কে যশোধরা ( গোপী) নামে এক পরমাসুন্দরী কন্যার সাথে বিবাহ দিয়ে দেন | গৌতমের বয়স ছিল তখন মাত্র 16 বছর | 29 বছর বয়সে গৌতমের একটি পুত্র সন্তান হয়| যার নাম রাহুল | কিন্তু এই সময় গৌতম ভাবতে থাকেন তিনি ক্রমশ সংসারের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যাচ্ছেন এবং এই বন্ধন মুক্তির জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠেন |

ললিতবিস্তার, বুদ্ধচরিত প্রভৃতি গ্রন্থে গৌতমের সন্নাস নেওয়া সম্প র্কে বলা হয়েছে রাতের বেলায় আত্মীয়সজনদের না জানিয়ে ঘোড়া কন্টকের পিঠে চড়ে সারথি ছন্দকের সঙ্গে তিনি গৃহ ত্যাগ করেন | পথে কন্টক ও ছন্দক কে বিদায় দিয়ে তিনি তাঁর পথচলা শুরু করেন |

অন্যদিকে অরিয়পরিয়েসনসু
ত্তে অন্য এক কাহিনীর অবতারনা আছে | এই গ্রন্থ থেকে জানা যায় গৌতম তাঁর সন্নাস গ্রহণের সংকল্পের কথা পিতা এবং মাসী কে বলেছিলেন | কিন্তু তাদের অনুমতি না পেয়ে তিনি একাকী বাড়ি ছেড়ে চলে যান | গৌতমের গৃহত্যাগের ঘটনাকে মহাভিনিস্ক্রমন. বলা হয় |

কেন গৌতম সন্ন্যাস গ্রহণ করলেন এখন সে সম্পকে বলব |
সুত্তনিপাতে বলা হয়েছে, গৃহীজীবন বন্ধনময়, দুঃখ কষ্টে ভরা | এই জীবনের প্রতি গৌতমের বিতৃষ্ণা জন্মে এবং এর ফলেই তিনি সন্ন্যাস নেন | ললিত বিস্তারে বলা হয়েছে প্রথম দিন জরা গ্রস্ত লোক. , দিতীয় দিন রুগ্ন ব্যক্তি তৃতীয় দিন মৃতদেহ ও চতুর্থ দিন সৌম্য কান্তি সন্ন্যাসী দেখে গৌতমের মনে প্রবল বৈরাগ্য জন্মে এবং তিনি গৃহত্যাগী হন |

গৃহ ত্যাগের পর ছয় বছর ধরে সন্ন্যাসী গৌতম মুক্তির সন্ধানে নানা স্থান ঘুরে বেড়ান | বৈশালী এবং রাজগৃহে দুজন শিক্ষকের কাছে শাস্ত্র পাঠ নেন | কিন্তু এসব করে তিনি মুক্তির পথ খুজে পেলেন না | অবশেষে তিনি উরুবি ল্ব বা বর্তমান বোধগয়া নামক স্থানে গিয়ে তপস্যা শুরু করেন | সঙ্গে ছিলেন তাঁর পাঁচ সতীর্থ | এ সাধনা চলল দীর্ঘ . বছর | কিন্তু কঠোর কৃচ্ছসাধনের পরও সত্যের কোন সন্ধান মিলল না | এ থেকে তাঁর উপলব্ধি হয় যে শরীর কে কষ্ট দিয়ে কঠোর তপস্যা করলেই সত্য লাভ করা যাবে, এ কথা ঠিক নয় | তাই গৌতম পাশেই বয়ে যাওয়া নৈরাঞ্জনা ( ফ ল্গু ) নদীতে স্নান করে সুজাতা নামে এক বনিক কন্যার দেওয়া পরমা ন্ন গ্রহণ করে এবং তাঁর পর. অনেকটা সাধারণ ভাবে মুক্তি লাভের পথে ব্রতী হয়ে এক অশ্বত্থ গাছের তলায় গভীর ধ্যানে বসেন | কিন্তু এইপবে তাঁর খাদ্য গ্রহণ তাঁর পাঁচ জন শিষ্য ভালো চোখে দেখেননি | তারা এতে বিরক্ত হয়ে তাঁর সঙ্গ ছেড়ে চলে যান |

অবশেষে বৈশাখী পূর্ণিমার রাতে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ | উনপঞ্চাশ দিন ধরে ধ্যান করার পর
তিনি বোধি প্রাপ্ত হন। এই সময় তিনি মানব জীবনে দুঃখ ও
তাঁর কারণ এবং দুঃখ নিবারণের উপায়
সম্বন্ধে অন্তর্দৃষ্টি লাভ করেন, যা
চতুরার্য সত্য নামে খ্যাত হয়।
তাঁর মতে এই সত্য সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ
করলে মুক্তি বা নির্বাণ লাভ সম্ভব।তখন তাঁর বয়স 35 বছর |
এরপর সারনাথে বুদ্ধ সর্বপ্রথম তাঁর ললিতবানী প্রচার করেন | শ্রোতারা হলেন তাঁর পাঁচ জন প্রাক্তন সতীর্থ -- বপ্র, ভদ্রিয়, অশবজিৎ,মহানাম ও কৌনডি ন্য | এই ঘটনা ধর্ম চক্রপ্রব র্তন নামে খ্যাত |
মহাপরিনিব্বানসুত্তে বলা হয়েছে, কুশীনগর যাওয়ার পথে বুদ্ধ পাবা শহরে এসে উপস্থিত হন | সেখানে তিনি কর্মকার চুন্দের অতিথি হন | চুন্দের বাড়িকে শূকরের মাংস খেয়ে বুদ্ধ অতিসার রোগে আক্রান্ত হন | সেখানেই তাঁর দেহাবসান হয়. | বুদ্ধের দেহাবসান পরিনিবা র্ণ বা মহাপরিনিবা র্ণ নামে খ্যাত |
 

নেতাজী রহস্য ফাঁস

আজ রানাঘাটে বি.এ. তৃতীয় বর্ষের বই কিনতে গেছিলাম | বই কিনে আসার সময় রানাঘাট স্টেশন সংলগ্ন একটি দোকানে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র সম্পর্কিত একটি সংক্ষিপ্ত বই দেখতে পায়| বইটি আমি পড়ার জন্য তার কাছে অনুরোধ করলে সেই দোকানদার আমাকে বইটি নিয়ে যেতে বলেন | আজ সেই বই থেকে আমি যেসব তথ্য পেয়েছি | সেই সব তথ্যই আপনাদের সামনে তুলে ধরছি |

এই বইটিতে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু সম্পর্কে বলা হয়েছে ফৈজাবাদের গুমনামি বাবাই নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন | আরও বলা হয়েছে উত্তর প্রদেশের ফৈজাবাদে " গুমনামি বাবা " ছদ্মনামে নেতাজী 1985 সাল পর্যন্ত অবস্থান করেছিলেন | পরে বেশী জানাজানি হয়ে যাওয়ায় সেখান থেকে অন্তর্ধান করেন | কয়েকজন অতি বিশ্বস্ত ভক্তকে দিয়ে তাঁর মৃত্যু ঘোষণা করা হয় এবং সঙ্গোপনে তথাকথিত দাহকার্য সম্পন্ন করা হয় অতি তৎপরতায় | শুধু তাই নয়, তাঁর উদ্দেশ্যে একটা স্মৃতি স্তম্ভও নির্মিত হয়েছে অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ভাবে | এই ব্যাপারে গুমনামী বাবার আশ্রম গৃহের মালিকও তাঁর ঘনিষ্ঠ ভক্তের বলিষ্ঠ বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য :-
" আমি স্হির নিশ্চিত যে গুমনামি বাবাই নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোস | এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই | .... এখানে আরও বলা হয়েছে ...নেতাজী আজও জীবিত এবং ঠিক সময়মত তিনি আত্মপ্রকাশ করবেন |
গুরু বসন্ত সিং
আর.টি.ও. ( অবসরপ্রাপ্ত)
" রামভবন " সিভিল লাইন্স, ফৈজাবাদ.

নেতাজী কোথায় আছে, কিভাবে আছে, কি করছে, শুধু ভারত সরকার নয়, পৃথিবীর সমস্ত বড় বড় রাষ্ট্র জানে, কিন্তু কারও কিছু করার ক্ষমতা নেই, সে আজ শক্তি সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেছে | ....তার প্রতি কি বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে এবং আজও করা হচ্ছে, দেশবাসী যেদিন জানবে, তাদের মাথায় খুন চাপবে, আর যাদের ফটো দেওয়ালে দেওয়ালে টাঙ্গিয়ে শ্রদ্ধার সঙ্গে ফুল মালা ধূপ ধূনো চড়াচ্ছে, সেই সব ফটো দেওয়াল থেকে নামাবে, থুথু দেবে, ডাস্টবিনে ফেলব. আরও জেনে রেখো, সে যেদিন ঢুকবে, মেকি মাতব্বর দেশপ্রেমিকের দল শিয়াল - কুকুরের মত পালিয়ে পথ পাবে না |
তাইহোকুতে তথাকথিত বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজীর মৃত্যু হয়নি | পরবর্তীতে রাশিয়ার সাইবেরিয়ার জেলে তাঁকে বন্দী অবস্থায় দেখা গেছে | এখানে উল্লেখযোগ্য, তদানিন্তন রাশিয়াস্থ ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিজয় লক্ষী পন্ডিত. ( তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর ভগিনী ) এ বিষয়ে জানতেন এবং নেতাজি চাক্ষুষও করেছিলেন | একথা আরও প্রমাণিত হয়....এই বিজয়লক্ষী পন্ডিত রাশিয়া থেকে ফিরে বিমান বন্দরে অবতরণ কালে সমবেত সাংবাদিক ও জনগণকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন -- " আমি তামাম ভারতবাসীর জন্য এমন এক সন্দেহ বহন করে এনেছি, যা ভারতের স্বাধীনতা লাভের থেকেও রোমাঞ্চকর ও আনন্দদায়ক | কিন্তু অত্যন্ত আশ্চর্যের ব্যাপার, অদৃশ্য প্রভাব বিস্তার করে তাঁর মুখ সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হয়. | ফলে জনগণ বা দেশবাসী জানতে পারল না সেই রোমাঞ্চকর কাহানি |
ঘটনাচক্রে একান্ত অপ্রত্যাশিতভাবে
সরকারের দীর্ঘ দিন ব্যাপী সযত্ন রক্ষিত নেতাজী সংক্রান্ত প্রায় 150 টি গোপন ফাইলের মধ্যে দুটি ফাইল প্রকাশ্যে আসায় গোপন তথ্যের কিছুটা ফাঁস হয়ে গেছে | 1948 সাল থেকে 1968 সাল পর্যন্ত দীর্ঘ 20 বছর নেহেরুর নির্দেশে ভারত সরকারের গোয়েন্দা শাখা গুলি নেতাজির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ভাইপো অমিয় বসু ও শিশির বসুর দেশের বাইরে ও ভিতরে গতিবিধির ওপর লাগাতার নজরদারি চালাত. এই নথি দুটি থেকে তা জানা যায় | দেখা গেছে, স্বাধীনতার সময় থেকে আজ পর্যন্ত কংগ্রেস সরকার দুটি বিষয় সিদ্ধ করতে চেয়েছে : এক, 1945 সালের 18 ই আগষ্ট বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজি মারা গেছে দুই, জাপানের রেনকোজি মন্দিরে রাখা চিতাভস্ম নেতাজীরই | এছাড়া অন্য যারাই সরকারে এসেছে, দেশব্যাপী গণদাবী ওঠা সত্ত্বেও সবারই একই বক্তব্য : ' নেতাজী ও আই.এন.এ. সংক্রান্ত গোপণ ফাইলগুলি প্রকাশ করা যাবে না, কারণ তাতে নাকি কয়েকটি বিদেশী রাষ্ট্রের সাথে ভারতের বৈদেশিক সম্পর্ক ক্ষুন্ন হবে | একমাত্র ভারত ছাড়া পৃথিবীর এমন কোনও গনতান্ত্রিক দেশ নেই যেখানে গোপনীয়তার দোহাই দিয়ে কোন স্পর্শকাতর নথিকে দীর্ঘ বছর ধরে আটকে রাখা যায়

ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ

ভারতমাতা অনেক বিশিষ্ট সন্তানের জন্ম দিয়েছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ | ড. রাধাকৃষ্ণাণ ব্যক্তিগতভাবে ছিলেন একজন মহান দার্শনিক এবং শিক্ষাব্রতী, কিন্তু জীবনে চলার পথে তাঁকে ভারতের রাষ্ট্রপতির পদে আসীন হতে হয়েছে |

মহাজ্ঞানী তপস্বী সাধক রাধাকৃষ্ণাণ বলেছেন যে, " আমাদের এই জীবন হল সাধনার জন্য | সাধনার পথেই জীবন উৎসর্গ করা প্রয়োজন | " তিনি সাধনাকেই নিজের জীবনের মূলমন্ত্র বলে স্বীকার করে নিয়েছিলেন |
এছাড়াও রাধাকৃষ্ণাণ বলেছেন যে, " আমরা আমাদের আরাধ্য দেবতাকে যেমন কখনোই কোনো অশুদ্ধ, নোংরা অশুচি জিনিস নিবেদন করি না, ঠিক তেমনই আমরা, অশুদ্ধ -অশুচি আত্মা আমাদের ভগবানের কাছে নিবেদন করতে পারি না | ভগবানের চরণে আত্মাকে নিবেদন করতে হলে তা শুদ্ধ করে নিতে হবে | তবেই তা হবে নিবেদনের জন্য যোগ্য | তবেই তা হয়ে উঠবে পবিত্র | "
রাধাকৃষ্ণাণ বলেছেন, জীবনে চলার পথে মানুষকে নানা চড়াই উৎরাই, ব্যথা - বেদনা, দুঃখ -কষ্ট প্রভৃতির মধ্য দিয়ে যেতে হয় | এরই নাম জীবন | এই পথে চলতে চলতে কখনো হতাশ হয়ে পড়তে নেই | দুঃখকে কখনো জীবনের শাস্তি বলে মনে করতে নেই | বরং বলা যেতে পারে দুঃখের মধ্য দিয়েই আমরা জীবনের চরম শিক্ষা পেতে পারি | যার দ্বারা আমরা নিয়মানুবর্তিতা
শিখতে পারি | শাস্তি থেকেই নিয়মানুবর্তিতার জন্ম. |
রাধাকৃষ্ণাণের মতে ভগবানের সঙ্গে নিভৃত আলাপ সব সময় মানুষের কাঙ্খিত হওয়া প্রয়োজন | আর সেই পথ একমাত্র সুগম হয় উপাসনার মাধ্যমে | আমরা মনে করি যে দেবতার উপাসনা করার একমাত্র উপায় হল উপবাস ও প্রা্র্থনা | কিন্তু ড. রাধাকৃষ্ণাণ উপবাস ও প্রার্থনা কে দেবতা আরাধনের একমাত্র পথ বলে মনে করেন না | তাঁর মতে ভগবতে নিবিষ্ট মনই হল পূজার একমাত্র আধার আর অনুতপ্ত হৃদয়ই হল সেই পূজার একমাত্র উপকরণ | অনুতাপের ফলেই মানুষের মনে যে দুঃখ হয়, তার কারণে যে অশ্রুসজল নয়ন,তার দ্বারাই একমাত্র পবিত্র মনে পূজা করা সম্ভব | এর ফলেই সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় |
তরুণ দের প্রতি ছিল রাধাকৃষ্ণানের তীক্ষ্ণ নজর | কারন তিনি জানতেন যে তরুণরাই হল দেশের ভবিষ্যৎ | তিনি তরুণদের জন্য অনেক কথা, অনেক আদর্শ তুলে ধরেছেন তাঁর " My Search of Truth " শীর্ষক গ্রন্থে | তিনি সবসময় ছাত্র ছাত্রীদের পাশে থাকার কথা বলেছেন | তিনি বলেছেন তাঁর জীবনের একটাই ইচ্ছা, তিনি যেন সর্বদা দেশের তরুণ তরুনীদের সঙ্গে থাকতে পারেন | তিনি যেন তাদের নীতিধর্ম শিক্ষা দিতে পারেন | আর এছাড়াও তিনি ছাত্রদের চরিত্র গঠনের জন্য জোর দেন আধ্যাত্মিকতার সাধনার দিকে | কারণ তিনি মনে করতেন যে একজন মানুষ তখনই সর্বতোভাবে পরিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে যখন সে নিজেকে আত্মীক ভাবে বলীয়ান করে তুলতে পারে |
রাধাকৃষ্ণানের দর্শন সম্বন্ধে মতবাদ বিশ্বের বিশিষ্ট জনের কাছে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে | দর্শন সম্বন্ধে তাঁর জ্ঞান সমুদ্রের মতো বিশাল অনন্ত | তাঁর মতবাদের সারমর্ম লিপিবদ্ধ করা আছে " An Idealist view of life " নামক গ্রন্থে |
বিলাতের বিখ্যাত এক অধ্যাপক. Prof. C.E.M. Joad. এই গ্রন্থ প্রসঙ্গে ' Spectator. ' নামক পত্রিকা লিখেছিলেন যে, সমগ্র বিশ্বে এমন কোনো গ্রন্থ এখনও মুদ্রিত হয়নি, যেখানে ধর্মকে এত সুন্দর করে উপস্থাপিত করা হয়েছে এবং যা মানুষের কাছে সমাদৃত হয়েছে | এমনকি রাধাকৃষ্ণাণ বর্তমান যুগকেও ধর্মের সাহায্যে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সমালোচনা করেছেন | এছাড়াও এই গ্রন্থে বর্তমান যুগকে আবেগ দিয়ে বিচার করতে শেখানো হয়েছে |
এই ধর্মগ্রন্থ স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পাঠ করে বলেছিলেন যে, এই ধর্ম বিষয়ক গ্রন্থটি যথেষ্ট মৌলিক এবং এটি মানুষের কাছে এক অমূল্য রত্ন | এর বাচন ভঙ্গি পাঠকের মন কেড়ে নেয় এবং এই লেখা দেখে বোঝাই যায় যে শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণাণ কতটা দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন |


বাদকুল্লার রেল

1862 সালে ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলের অধীনে কলিকাতা থেকে নদীয়া জেলার কুষ্টিয়া পর্যন্ত রেলপথ চালু হয় | এই রেলপথ তখন বেসরকারি কোম্পানির অধীন ছিল | 1877 সালে ইস্টার্ন বেঙ্গল স্টেট রেলওয়ে নাম হয়ে এই রেলপথ সরকারের হাতে আসে | সে সময় নদীয়া জেলারভিতরে 100 মাইল রেলপথ ও 21 টি স্টেশন ছিল | ঐ সময় কৃষ্ণনগরে কোন স্টেশন ছিল না | কৃষ্ণনগরের লোকদের বগুলায় এসে ট্রেন ধরতে হত | 1898 সালে রাণাঘাট থেকে কৃষ্ণনগরের ভায়া শান্তিপুর
20 মাইল দীর্ঘ একটি ছোট রেলের লাইন মার্টিন কোম্পানি চালু করেন | 1904 সালে রাণাঘাট থেকে কৃষ্ণনগরের উপর দিয়ে লালগোলা লাইন চালু হয় | তখন নদীয়া জেলার মধ্যে এই পথে 48 মাইল রেলপথ ও 8. টি স্টেশন চালু হয় | সে সময় থেকেই বাদকুল্লা রেল স্টেশনের পত্তন |
বর্তমানে আমরা যেখানে বাদকুল্লা স্টেশন দেখি, আগে সেখানে বাদকুল্লা স্টেশন ছিল না | পাতুয়ার রেলগেট ছেড়ে যেয়ে যে শনি মন্দির আমরা দেখতে পাই, সেখানেই প্রথম স্টেশন গড়ে ওঠে | কথিত আছে, বাদকুল্লার সমৃদ্ধ জমিদার প্রয়াত গগন চন্দ্র বিশ্বাস পাতুয়ার স্টেশন থেকে নেমে নিজের বাড়িতে আসতে খুব কষ্ট পেতেন | তাই তিনি নিয়মিত বাদকুল্লায় ট্রেন এলে এলার্ম চেন টেনে গাড়ি থামিয়ে ফাইন দিয়ে বাড়ি যেতেন | কিন্তু পরবর্তীকালে তিনি 180 বিঘা জমি রেলকে দান করে রেলস্টেশন বর্তমান বাদকুল্লায় নিয়ে আসেন |
স্বাধীনতার পর রেল পরিবহনের প্রভূত উন্নতি হয়েছে | 1948 সালের হিসাবে দেখা যায় শিয়ালদহ - কৃষ্ণনগর 4 টি লোকাল ট্রেন, রানাঘাট - কৃষ্ণনগর 4 টি লোকাল ট্রেন যাতায়াত করত | এ প্রসঙ্গে বলে রাখা দরকার তাহেরপুর এবং কালীনারায়ণপুর এই দুটি রেলস্টেশন বাদকুল্লার অনেক পড়ে চালু হয় | 1954 সালের 5 ই জুলাই তাহেরপুর এবং 1955 সালের 1 লা এপ্রিল কালীনারায়ণপুর স্টেশন চালু হয় | এরপর আসে রেলপথের বৈদ্যুতিকরণ ব্যবস্থা | 1965 সালে বাদকুল্লার উপর দিয়ে রেলপথের বৈদ্যুতিকরণ সমাপ্ত হয় |
বর্তমানে বাদকুল্লা স্টেশনে তিনটি প্লাটফর্ম আছে | এছাড়া বসার জায়গা, পায়খানা, প্রস্রাবের জায়গা, পুরো প্লাটফর্ম জুড়ে শেড দেওয়া এবং ওভারব্রিজের ব্যবস্থা রয়েছে |

তথ্য সূত্র :- বাদকুল্লা পরিচয়

গাণ্ড

1948 সালের. 20শে জানুয়ারি সন্ধ্যায়. ভারতের রাজধানী নিউ দিল্লির বিড়লা ভবনের প্রাচীর ধার ঘেঁষে এক বিষ্ফোরন ঘটেছিল | জিনিসটা ছিল সাধারণ পেটো | প্রাচীর টার খানিকটা ক্ষতি হয়েছিল | দিল্লির এই বিড়লা ভবনে তখন গান্ধীজি বাস করছিলেন | ভবনের সামনের চত্বরে তিনি তার প্রার্থনা সভা চালাচ্ছিলেন |
দিল্লি এবং এ দেশের অন্যান্য অংশেরও আবহাওয়া তখন তপ্ত মানসিকতাতেও ছিল চাপা উত্তেজনা | এর কারণ মাস কয়েক আগেই হিন্দুস্তানের অঙ্গ-ব্যবচ্ছেদ করা হয়েছে | হিন্দুস্তানের একটা অংশকে কেটে বার করে এনে সৃষ্টি করা হল ধর্মীয় শাসন ভিত্তিক স্বাধীন মুসলমান রাষ্ট্র - পাকিস্তান | কংগ্রেসের নেতারা তখন হিন্দু মুসলমান ঐক্য এবং ধর্মনিরপেক্ষতার
অলীক কল্পনায় মত্ত ছিলেন | তাদের আগ্রহের এবং নীতিগত ঘোষণার ঠিক উল্টোটাই তারা করে বসলেন -- হিন্দুস্থানের মাটির ওপরেই তারা এক ধর্ম শাসিত মুসলমান রাষ্ট্র স্বীকার করে বসলেন | নিজেদের এই পরাজয় টাকে ঢাকা দিতে তারা হিন্দুদের একটা 'জাতি' বলেই. স্বীকার করলেন না --- স্বীকার করলেন সম্প্রদায় হিসাবে |
ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি | যেদিন ভারত ভাগ হল তখন অখন্ড ভারত বিভক্ত হল এমন দুই ভাগে যার একটি হল মুসলমান রাষ্ট্র, অন্যটি অমুসলমান রাষ্ট্র নয় ----- ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র |
দেশবিভাজনের তীব্র বেদনার পথরেখা ধরে এলো গণহত্যা, ধর্ষণ, তীব্র হিংস্রতা আর লক্ষ লক্ষ মানুষের গৃহহারা উদ্বাস্তু হওয়া | এগুলিই সেই কালের সাধারণ নীতি হয়ে উঠল |
গান্ধী , --- মহাত্মা বলেই তিনি সর্বলোকমান্য -- এক মহান আত্মা --- এই রাজনীতিতে এক সমুজ্জ্বল ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন | হিন্দু দের মধ্যে যারা এই দেশ বিভাগের ফলে সমূহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন এবং যারা ভ্রাতৃত্ববোধের দ্বারা তাদের দুঃখে সহানুভূতি সম্পন্ন ছিলেন, তারা তার প্রতি বিক্ষুব্ধ হচ্ছিলেন | আর তাই বিড়লা ভবনের চতুর্দ্দিকে বেশি করে পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছিল --- তাকে যে কোন রকম আক্রমণ থেকে রক্ষা করবার জন্য |
1948 সালের 20শে জানুয়ারি যে বিষ্ফোরন ঘটে, তার আক্রমণের লক্ষ্য গান্ধী ছিলেন না | তিনি যে মঞ্চে বসেছিলেন, তা ছিল সেখান থেকে প্রায় এক'শ পঞ্চাশ ফুট দূরে | যাই হোক এই ঘটনায় মদনলাল পাওয়া নামে একজন ঘটনাস্থলে গ্রেপ্তার হন | দেশবিভাগের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দুদের মধ্যে তিনি একজন ছিলেন. | এই ঘটনার পর পুলিশ বিড়লা ভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করল |
এই ঘটনার দশদিন পর আকস্মিক ভাবেই 1948 সালের 30জানুয়ারি বিকেল পাঁচটায় গান্ধী যখন প্রার্থনা সভার মঞ্চে আসবার মাঝখানে এসেছেন, তখনই নাথুরাম গডসে সামনাসামনি দাঁড়িয়ে গুলি করলেন তাঁকে | গান্ধীর মুখ দিয়ে একটা অতিমৃদু ও অস্ফুট 'আ:' ধ্বনি বেরিয়ে এল, সম্ভবত আকস্মিক তীব্র আঘাত ও জৈবিক প্রতিক্রিয়াতেই | তিনি মাটিতে পড়ে গেলেন | মুহূর্তে তিনি চেতনা হারালেন | মিনিট কুড়ির মধ্যে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন | গুলি করেই নাথুরাম অস্ত্রশুদ্ধ হাত তুলে দাঁড়াল এবং পুলিশ কে ডাকল | পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করল |

তথ্য সূত্র :- শুনুন ধর্মাবতার
 

আকবরের আমলের রামায়ণ

সম্রাট আকবরের আমলে তাঁর ইচ্ছাক্রমে সংস্কৃত ভাষা থেকে ফার্সি ভাষাতে রামায়ণ অনুবাদ করা হয়েছিল | দীর্ঘ চার বছর ধরে এই অনুবাদ করার কাজ চলেছিল | আর এই কাজটি করেছিলেন আকবরের রাজদরবারের একজন কর্মী বদাওনি | বদাওনির এই কাজের পুরস্কার স্বরুপ সম্রাট তাঁকে বিশেষ ভাবে পুরস্কৃত করেন | এই কৃতিত্বের স্বীকৃতি হিসাবে তিনি একটি অশ্ব, একটি শাল এবং ' মদদ ই মাস. ' হিসাবে এক হাজার বিঘা নিষ্করভূখন্ড লাভ করেন | অতঃপর সম্রাটের অনুরোধে তিনি ফার্সীতে ' মহাভারত ' অনুবাদের কাজে হাত দেন | তবে এই অনুবাদের কাজ তিনি সম্পূর্ণ করে যেতে পারেননি |

বর্তমান উত্তরপ্রদেশের বদাওন অঞ্চলে 1550 খ্রীঃ জন্মগ্রহণ করেন বদাওনি | তবে কারও কারও মতে তাঁর জন্ম স্থান ছিল ফতেপুর সিক্রির নিকটবর্তী গ্রাম টোডা | তাঁর প্রকৃত নাম - মোল্লা আব্দুল কাদির ইবন মুলুক্ষা | দীর্ঘ চারদশক তিনি আবুল ফজলের পিতা শেখ মুবারকের সান্নিধ্যে থেকে ধর্মতত্ত্ব সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেন |
এই বদাওনির সঙ্গে আবুল ফজলের প্রথম দিকে খুব ভালো সখ্যতা ছিল | কিন্তু পরবর্তীতে আবুল ফজলের সঙ্গে আকবরের বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠলে বদাওনি ঈর্ষান্বিত হন | গোঁড়া সুন্নী মুসলমান বদাওনি সম্রাট আকবরের উদার ধর্মনীতি মেনে নিতে পারেননি | ফলে উভয়ের সম্পর্কে চিড় ধরে | এমনকি আকবরের প্রশাসনের তরফ থেকে তিনি যেসব সুযোগ সুবিধা ভোগ করতেন তাও বন্ধ করে দেওয়া হয় | শেষ জীবনে প্রায় নিঃস্ব অবস্থায় ভগ্ন হৃদয়ে বদাওনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন |

বিনয় বাদল দীনেশ

ইতিহাসের বিনয় বাদল দীনেশের কথা আমরা সকলেই শুনেছি এবং তাদের রাইটার্স বিল্ডিং অভিযানের কথাও শুনেছি যা ' অলিন্দ যুদ্ধ ' বা বারান্দা বেটল ' নামে খ্যাত | আজ সেই বিনয় বাদল দীনেশদের ছেলেবেলা সম্পর্কে আলোচনা করব | কিভাবে তাঁরা স্বাভাবিক জীবন যাপন ছেড়ে শেষ পর্যন্ত দেশের জন্য জীবন দিলেন সেই ঘটনাক্রম সম্পর্কেইই আজ বলব |
বাদল গুপ্ত (1912-1930) :-----------
1912 সালে ঢাকার বিক্রমপুর এলাকার পূর্ব শিমুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বাদল গুপ্ত | তাঁর আসল নাম ছিল সুধীর গুপ্ত, তবে সকলে তাঁকে বাদল বলেই ডাকত | বাদলের পিতার নাম ছিল অবনী গুপ্ত | বাদলের পড়াশোনা শুরু হয়েছিল পিতা মাতার হাত ধরেই | প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার পর বাদল ভর্তি হয় ' বানারিপাড়া স্কুলে ' | ছোটো বেলা থেকেই বাদল ছিল প্রচন্ড রাগী | তবে একটু বড় হওয়ার পর তার সেই মানসিকতা পাল্টায় | স্কুলে পড়ার সময় বাদল বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিকুঞ্জ সেনের সংস্পর্শে আসে | তার সান্নিধ্য থেকেই বাদল গুপ্ত স্বদেশি রাজনীতি সঙ্গে জড়িয়ে পরে | নিকুঞ্জ সেন ছিলেন বিপ্লবী দলের সদস্য | এই শিক্ষকের হাত ধরেই খুব সম্ভবত নবম বা দশম শ্রেণীতে পড়ার সময় বাদল গুপ্ত ' বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স ' ( বি.ভি) নামে একটি গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠনের সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন | অল্পদিনের মধ্যেই বাদল এই সংগঠনের একজন সক্রিয় সদস্য হিসাবে নিজেকে প্রকাশ করেন |

দীনেশ গুপ্ত ( 1911 - 1931 ) :------
1911 সালের 6'ই ডিসেম্বর তদানীন্তন ঢাকা জেলার যশোলঙে জন্মগ্রহণ করেন বিপ্লবী দীনেশ গুপ্ত | দীনেশের ডাক নাম ছিল - নসু | পিতা নাম ছিল সতীশচন্দ্র গুপ্ত এবং মাতার নাম ছিল বিনোদিনী দেবী | চার ভাই এবং চার বোনের মধ্যে দীনেশ ছিলেন পিতামাতার তৃতীয় সন্তান | সতীশচন্দ্র ছিলেন ডাকবিভাগের কর্মচারী | চাকুরী সূত্রে তিনি কিছু কাল গৌরীপুরে ছিলেন | সেখানেই দীনেশের শিক্ষারম্ভ হয় | পরে যখন দীনেশের নয় বছর বয়স হয় তখন তিনি ভর্তি হন ' ঢাকা কলেজিয়েট ' স্কুলে | কিশোর বয়সে দীনেশ ' বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স ' এ যোগদেন | 1926 সালে ঢাকা বোর্ড থেকে ম্যাট্রিক পাস করার পর তিনি মেদিনীপুরে তাঁর বড়োদাদা যতীশচন্দ্রের কাছে বেড়াতে যান | এই সময় থেকেই মেদিনীপুর শহরে বিপ্লবী সংগঠন গড়ে তোলার সুপ্ত বাসনা তার মধ্যে জাগে | তবে দলের নির্দেশে সেবার তাঁকে ঢাকায় চলে আসতে হয়েছিল বলে তিনি মেদিনীপুরে বিশেষ কিছুই করতে পারেননি | 1928 সালে তিনি ঢাকা কলেজ থেকে আই.এস.সি পরীক্ষা দেন | কিন্তু সেই পরীক্ষায় দীনেশ অকৃতকার্য হন | এরপর তিনি মেদিনীপুর গিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন | এই সময় মেদিনীপুরে বিভিন্ন শাখা স্থাপনের দায়িত্ব তাঁকে
দেওয়া হয় | ঢাকা কলেজে পড়ার সময় 1928 সালে দীনেশ ' ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে'র কলকাতা সেশনের প্রাক্কালে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস সংগঠিত ' বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স ' এ যোগদান করেন | শীর্ঘই এই সংগঠন একটি সক্রিয় বিপ্লবী সংগঠনে পরিবর্তিত হয় এবং কুখ্যাত ব্রিটিশ অফিসারদের হত্যা /
নিশ্চীর্ণ করার পরিকল্পনা করেন | স্থানীয় বিপ্লবীদের আগ্নেয়াস্ত্র চালানো শেখানোর জন্য দীনেশ গুপ্ত কিছু সময় মেদিনীপুরে ছিলেন | তাঁর প্রশিক্ষিত বিপ্লবীরা ডগলাস , বার্জ এবং পেডি ......এই তিনজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে পরপর হত্যা করেছিল |

বিনয় কৃষ্ণ বসু ( 1908- 1930 ) :---------
1908 সালের 11'ই সেপ্টেম্বর মুন্সিগঞ্জ জেলার রোহিতভাগ গ্রামে বিনয় কৃষ্ণ বসু জন্ম গ্রহণ করেন | তাঁর পিতা রেবতীমোহন বসু ছিলেন একজন প্রকৌশলী | ঢাকায় ম্যাট্রিক পরীক্ষা পাশ করার পর বিনয় ' মিটফোর্ড মেডিকেল স্কুল ' এ ভর্তি হন | এ সময় তিনি ঢাকার ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী হেমচন্দ্র ঘোষের সংস্পর্শে আসেন এবং যুগান্তর দলের সাথে জড়িত থাকার জন্য তিনি চিকিৎসা শাস্ত্রে তাঁর পড়ালেখা শেষ করতে পারেননি | বিনয় ও তাঁর সহযোদ্ধারা ' বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স ' দলে যোগ দেন 1928 সালে | 1930 সালের 9'ই আগষ্ট সাধারণ বেশভূষায় নিরাপত্তা গন্ডিকে ফাঁকি দিয়ে অত্যাচারী ইন্সপেক্টর লোম্যনের খুব কাছে এসে তাকে গুলি করেন বিনয় | ঘটনাস্থলেই লোম্যানের মৃত্যু হয় | এরপর বিনয় কলকাতায় চলে আসেন |
এপর্যন্ত এই তিনজন বিপ্লবীদের কার্যকলাপকে পৃথক পৃথক ভাবে আলোচনা করছিলাম. | এবার শেষপর্যায়ে আমি এই তিনজন বিপ্লবীর ' রাইটার্স বিল্ডিং ' আক্রমণ করার ঘটনা বিবরণ দেওয়ার চেষ্টা করব যা ইতিহাস ' অলিন্দ যুদ্ধ ' নামে খ্যাত | বন্দী বিপ্লবীদের উপর অমানসিক অত্যাচার করার জন্য জেলের বাইরের ' বি.ভি ' র বিপ্লবীরা কুখ্যাত ইন্সপেক্টর জেনারেল কর্নেল এন.এস.সিম্পসন কে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন | তৎকালীন সময়ে কলকাতার ডালহৌসি স্কোয়ারে ছিল ব্রিটিশ শাসকদের সচিবালয় | যার নাম রাখা হয়েছিল ' রাইটার্স ভবন ' | সেই ভবনেই উচ্চ পদস্থ ব্রিটিশ আমলারা নিয়মিত অফিস করতেন | বিনয় বাদল এবং দীনেশকে এই ভবন আক্রমণ করে সিম্পসন কে হত্যা করার নির্দেশ দেওয়া হয় | 1930 সালের 8ই ডিসেম্বর দুপুর 12 টায়. তারা শুরু করলেন তাদের অ্যাকশন | প্রথমেই তারা সিম্পসন কে হত্যা করে সহযোদ্ধা দের হত্যার প্রতিশোধ নিলেন | এরপর ব্রিটিশ গুর্খা বাহিনীর সঙ্গে তাদের লড়াই শুরু হয় | এটিই ইতিহাসে ' অলিন্দ যুদ্ধ ' পরিচিত | পালানো অসম্ভব দেখে ' পটাশিয়াম সায়ানাইড ' খেয়ে তিন জনই আত্মহত্যা হত্যার চেষ্টা করেন | বিষক্রিয়ায় অতিঅতিদ্রুমৃত্যু হওয়ার আশঙ্কায় এবার তিনজনই তাদের পিস্তলের শেষগুলিটি নিজেদের মাথা লক্ষ্য করে চালিয়েদেন | ঘটনাস্থলেই বাদলের মৃত্যু হয় | বিনয় ও দীনেশ কে গুরুতর আহত আবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়. | বিনয় ছিলেন মেডিকেলের ছাত্র তাই মৃত্যুকে কিভাবে বরন করতে হয় তা তিনি জানতেন | তাই 1930 সালের 12 ই ডিসেম্বর রাতে বিনয় নিজের মাথার ব্যান্ডেড খুলে ক্ষত জায়গায় আঘাত করে মৃত্যুকে বরণ করেন | আর দীনেশ কে 1931 সালের 7ই জুলাই ফাঁসি দেওয়া হয় |
আজ আমাদের শেষ স্বাধীন | কিন্তু আমাদের দেশের বর্তমান নেতাগণ এই সব বলিদান কে ভুলে গিয়েছে | তারা জানে না যে এই দেশকে স্বাধীন করার জন্য কত মায়ের কোলখালি হয়েছে | তারা যদি এইসব দেশনায়কদের বলিদান কে জানত তাহলে তারা আর হিৎসাকে উসকে দিত না তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আসত না তারা একে অপরে শুধু মাত্র দলীয় পার্থক্যের জন্য মারতে উদ্যত হত না ......

হিটলার

এযাবৎ অ্যাডলফ হিটলার সম্পর্কিত পোস্ট গুলিতে তাঁর নানা ধরনের কর্মকান্ড তুলে ধরেছি | কিন্তু আজ হিটলারের কুকর্ম গুলিকে দূরে রেখে ইভা ব্রাউনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কে তুলে ধরব | হিটলারের প্রেমিকা ছিলেন ইভা আন্না পাউলো ব্রাউন | এবং পরবর্তীতে হিটলার তাঁকে বিয়েও করেছিলেন | কিন্তু বিবাহের 40ঘন্টারও কম সময়ের মধ্যে হিটলার সস্ত্রীক আত্মহত্যা করেছিলেন | কার্যত বাধ্য হয়েই হিটলার কে আত্মহত্যা করতে হয়েছিল | সে যাইহোক হিটলার অবশ্য ইভাকে অন্যত্র গিয়ে সুন্দর জীবন যাপনের পরামর্শ দিয়েছিলেন | কিন্তু ইভা হিটলার কে প্রচন্ড ভালোবাসতেন | ফলে তিনি অন্যত্র না গিয়ে প্রেমিক হিটলারের সঙ্গে জীবন বিসর্জন দেওয়াকেই শ্রেয় মনে করেছিলেন এবং একই সঙ্গে দুজনে শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করেন |

হিটলারের জন্ম 1889সালের 20শে এপ্রিল আর ইভার জন্ম 1912সালের 12ই ফেব্রুয়ারি তাদের মধ্যে বয়সের বিস্তর ব্যবধান ছিল | ইভা হিটলারের থেকে 23বছরের ছোটো ছিলেন | কিন্তু বয়সে ব্যবধান তাদের সম্পর্কে বাধাদান করেনি | হিটলারের সঙ্গে ইভার প্রথম দেখা হয় মিউনিখে | তখন ইভার বয়স ছিল 17| ইভা হিটলারের পার্সোনাল ফটোগ্রাফারের সহকারী ও মডেল হিসাবে কাজ করতেন | প্রথম দেখার দু বছর পর থেকে তাদের মধ্যে নিয়মিত সাক্ষাৎ হত | 1936সালের পর থেকে হিটলারের বার্গহফ নামের বাড়িতেই বসবাস শুরু করেন ইভা | হিটলারের এই বাড়ি ছিল ব্যাভারিয়ান পর্বতশৃঙ্গের বার্খটেসগার্ডেন
মিউনিসিপ্যালিটি এলাকায় | ইভা জনসমক্ষে তেমন আসতেন না | তবে 1942 সালে তাঁর বোনের সাথে হিটলারের এক সামরিক অফিসারের বিবাহ হলে তাঁকে প্রকাশ্যে আসতে দেখা যায় |
1945সালের 30শে এপ্রিল আত্মহত্যার পূর্বেও ইভা একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন 1936সালে | খুব সম্ভবত হিটলারের সাথে মনমালিন্যের জন্যেই সেবার তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন | ইভা ব্রাউনের ধূমপান করা, অতিরিক্ত প্রসাধন সামগ্রীর ব্যবহার এবং ছোটো পোশাক পরে রোদ পোহানো ইত্যাদি নানা কার্যকলাপ হিটলার কে ক্ষুব্ধ করত | তিনি এসব পছন্দ করতেন না |
1945সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিনগুলিতে হিটলারের পতন যখন আসন্ন তখন হিটলার অধিকাংশ সময়ই ব্যাঙ্কারে থাকতেন | এই ব্যাঙ্কারেই হিটলার এবং ইভার বিবাহ হয় 1945সালের 29শে এপ্রিল এবং বিবাহের পর দিন 1945সালের 30শে এপ্রিল তারা আত্মহত্যা করেন |
 

HITLAR

হিটলার সম্পর্কিত পূর্ববর্তী দুটি আলোচনায় আমি যথাক্রমে হিটলারের পিতার বৈবাহিক ঘটনা ক্রম এবং তারপরের আলোচনায় হিটলার কিভাবে জার্মানির শাসনক্ষমতা দখল করেছিলেন তা নিয়ে আলোচনা করেছি | আজ আমি হিটলারের নেতৃত্বে জার্মানি কিভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগদান করল তানিয়েই আলোচনা করব |

1935 সালে হিটলার জার্মানিতে নতুন আইন চালু করে দেশের নাগরিকদের দুটি ভাগে ভাগ করে দিলেন | ( জেন্টিল এবং জু) জেন্টিল অর্থাৎ জার্মান আর জু অর্থায় ইহুদী | এই আইনে বলা হল জার্মানরা দেশের প্রকৃত নাগরিক আর জু 'রা জার্মানিতে বসবাসকারী হলেও তারা এদেশের নাগরিক নন | প্রয়োজনে তাদের দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে |
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে জার্মানির সমস্ত ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিল মিত্রপক্ষ | কিন্তু 1933 সালে হিটলার জার্মানির হাল ধরার সাথে সাথে জার্মানির অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে থাকে | হিটলার জার্মানির শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই ভার্সাই চুক্তির শর্তগুলি মানতে অস্বীকার করেন | 1934 সালে হিটলার রাষ্ট্রপতির পরিবর্তে নিজেকে জার্মানির ফুয়েরার হিসাবে ঘোষণা করেন এবং অল্পদিনের মধ্যেই নিজেকে দেশের অবিসংবাদিত নেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেন | হিটলার তাঁর সমস্ত ক্ষমতা নিয়োগ করেছিলেন দেশের সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে | এই কাজে তাঁর সহযোগীরা ছিলেন কয়েকজন সুদক্ষ সেনানায়ক এবং প্রচারবিদ | কিছুদিনের মধ্যেই হিটলার ভার্সাই সন্ধির শর্ত ভঙ্গ করে রাইনল্যান্ড অধিকার করেন | অষ্ট্রিয়া এবং ইতালি একসূত্রে আবদ্ধ হয় জার্মানির সাথে | ইতালির সর্বাধিনায়ক ছিলেন মুসোলিনী | একদিকে ইতালীর ফ্যাসিবাদী শক্তি অন্যদিকে নাৎসি জার্মানি | বিশ্বজয়ের স্বপ্নে উন্মত্ত হয়ে ওঠে ইতালি | প্রথমে আলবেনিয়া ও পরে ইথিওপিয়ার বেশ কিছু অংশ দখল করে নেয় ইতালি | অবশেষে হিটলার পোল্যান্ডের কাছে ডানজিগ ও পোলিশ করিডর দাবি করলেন | যাতে এই অঞ্চলে সৈন্য সমাবেশ করতে পারেন | পোল্যান্ডের সরকার এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে | পোল্যান্ডের ধারণা ছিল হিটলারের নেতৃত্বে জার্মানি পোল্যান্ড আক্রমণ করলে ইউরোপের অন্যান্য দেশ পোল্যান্ডের পক্ষ নেবে | এবং ইউরোপের সম্মিলিত বাহিনীর কাছে হিটলার পরাজিত হবে | কিন্তু 1939 সালের 1লা সেপ্টেম্বর জার্মান বাহিনী পোল্যান্ড আক্রমণ করলে মাত্র 15দিনের মাথায় পোল্যান্ড পরাজিত হয় এবং জার্মানি পোল্যান্ড অধিকার করে | পোল্যান্ডের পর হিটলার দখল করলেন নরওয়ে ও ডেনমার্ক | নরওয়েতে বিরাট সংখ্যক ব্রিটিশ সেনা মোতায়েন ছিল | এই আক্রমণের ফলে অধিকাংশ ব্রিটিশ সেনা নিহত হয় | এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চেম্বারলিন পদত্যাগ করলেন এবং নতুন প্রধানমন্ত্রী হলেন চার্চিল | এরপর হিটলার ফ্রান্স আক্রমণের পরিকল্পনা করেন | ফ্রান্স নিজ সুরক্ষার জন্য. জার্মান সীমান্তে দূর্ভেদ্য ব্যূহ সৃষ্টি করেছিল | যাকে বলা হতো ম্যাজিনো | বেলজিয়াম আক্রমণ করে সেই দেশের মধ্য দিয়ে ফ্রান্সের সীমান্তে উপস্থিত হলো জার্মান বাহিনী | সোঁদায় তুমুল যুদ্ধের পর ফরাসি বাহিনী পরাজিত হয় | ফরাসিদের এই বিপর্যয়ের সুবিধা নেওয়ার জন্য ইতালি নিজেকে জার্মানির মিত্র হিসাবে ঘোষণা করে যুদ্ধে যোগ দেয় | এই ভাবে সমগ্র ইউরোপ -আফ্রিকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ আগুন | আজ এ পর্যন্তই থাক পরবর্তী আলোচনায় আরও নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাবে |

হিটলার

হিটলার সম্পর্কিত পূর্ববর্তী আলোচনায় আমি হিটলারের পিতা অথাৎ এলোইস হিটলারের বৈবাহিক সম্পর্কের ঘটনাক্রম তুলে ধরেছিলাম | আজ আমি হিটলার কিভাবে জার্মানির ক্ষমতা দখল করলেন তা নিয়েই আলোচনা করব | মায়ের মৃত্যুর পর সংসারের বন্ধন থেকে পুরোপুরি সম্পর্ক ছিন্ন করেন | এবং ভিয়েনা চলে আসেন | ভিয়েনাতে এসে তিনি মজুরের কাজ শুরু করেন | এরপর রং বিক্রি করতে আরম্ভ করেন | এই ভিয়েনা অবস্থান কালেই তাঁর মধ্যে জেগে ওঠে চরম ইহুদী বিদ্বেষ | কারণ তখন জার্মানির অধিকাংশ কলকারখানা , সংবাদপত্রের মালিক ছিল ইহুদীরা | দেশের অর্থনীতির অনেকটাই ইহুদীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হত | কিন্তু হিটলার কিছুতেই এটিকে মেনে নিতে পারছিলেন না যে, জার্মান দেশে বাস করে জার্মানিদের উপরেই প্রভুত্ব করবে ইহুদীরা | 1912 সালে তিনি জার্মানি ছেড়ে এলেন মিউনিখে | দুঃখ কষ্টের মধ্য দিয়ে হিটলারের কেটে গেল আরও দুটি বছর | এরপর 1914 সালে শুরু হল প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ | হিটলার সৈনিক হিসাবে যুদ্ধে যোগ দিলেন | যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর গোটা জার্মানি জুড়ে দেখা দিল বিশৃঙ্খলা আর অনাহার | তার মধ্যেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠল বিভিন্ন বিপ্লবী দল, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল | এদের উপর গোয়েন্দা গিরি করার জন্য হিটলার কে নিয়োগ করল কতৃপক্ষ | সেই সময় প্রধান রাজনৈতিক দল ছিল লের্বার পার্টি | হিটলার সেই পার্টির সদস্য হলেন | অল্পদিনের মধ্যেই পাকাপাকিভাবে পার্টিতে নিজের স্থান করে নিলেন হিটলার | এক বছরের মধ্যেই তিনি হলেন পার্টি প্রধান | দলের নতুন নাম রাখা হয় ' ন্যাশনাল ওয়ার্কার্স পার্টি ' | পরবর্তীকালে এই দলকেই বলা হত ' নাৎসি পার্টি ' | 1920 সালের 24ফেব্রুয়ারি প্রথম নাৎসি দলের সভা ডাকা হল | এতেই হিটলার প্রকাশ করলেন তাঁর পঁচিশ দফা দাবি | এরপর হিটলার প্রকাশ করলেন স্বস্তিকা চিহ্ন যুক্ত দলের পতাকা | ক্রমশই নাৎসি দলের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে | তিন বছরের মধ্যেই দলের সদস্য সংখ্যা হয় প্রায় 5600 0 এবং এটি জার্মানির রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রাহন করতে থাকে | হিটলার চেয়েছিলেন মিউনিখে তাঁর দল ছাড়া অন্য কোনো দলের যাতে অস্তিত্ব না থাকে | এক সময় তাঁর পরিকল্পিত এক রাজনৈতিক চক্রান্ত ব্যর্থ হয় | এবং পুলিশের হাতে ধরা পড়েন | তাঁকে এক বছরের জন্য ল্যান্ডসবার্গের
পুরোনো দূর্গে বন্দি করে রাখা হয় | জেল থেকে মুক্তি পেয়ে আবার রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন হিটলার | তার উগ্র মতবাদ. , বলিষ্ঠ বক্তব্য জার্মানদের আকৃষ্ট করে | দলে দলে যুবক তাঁর দলের সদস্য হতে আরম্ভ করে | সমস্ত দেশে জনপ্রিয় নেতা হয়ে উঠলেন হিটলার | 1933 সালের নির্বাচনে বিপুল ভোট পেলেন কিন্তু সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেলেন না | পার্লামেন্টের 647টির মধ্যে তার দলের আসন ছিল 288 | এর ফলে হিটলার বুঝতে পারলেন যে ক্ষমতা যদি দখল করতে হয় তাহলে অন্য পথ ধরতে হবে | কোনো দল সংখ্যা গরিষ্ঠতা না পাওয়ায় হিটলার পার্লামেন্ট ভেঙে দিলেন | এবার ক্ষমতা দখলের জন্য শুরু হল তাঁর ঘৃণ্য চক্রান্ত | বিরোধীদের অনেকেই খুন হলেন | অনেকে মিথ্যা অভিযোগে জেলে গেল | বিরোধী দলে নিজের দলের লোক প্রবেশ করিয়ে দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা তৈরি করলেন | অল্পদিনের মধ্যেই বিরোধী পক্ষকে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে হিটলার হয়ে উঠলেন শুধু নাৎসি দলের নয়. , সমগ্র জার্মানির ভাগ্য বিধাতা | এই ভাবে হিটলার বিভিন্ন উত্থান পতনের. মধ্য দিয়ে নিজেকে জার্মানির অধিপতি হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন. | পরবর্তী আলোচনায় হিটলারের নেতৃত্বে জার্মানির প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে যোগদান নিয়ে আলোচনা করব |


অ্যাডলফ হিটলার

বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম প্রধান বিতর্কিত এবং একই সঙ্গে চর্চিত চরিত্র হলেন অ্যাডলফ হিটলার | হিটলারকে নিয়ে প্রায় প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই কমবেশি কৌতুহল লক্ষ্যকরা যায় | তবে আজ আমি হিটলারের রাজনৈতিক জীবন নিয়ে আলোচনা করব না | কীভাবে হিটলারের জন্ম হল তা নিয়েই আলোচনা করব অথাৎ হিটলারের পিতার বিবাহের ঘটনাক্রম সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করব |
হিটলারের মূল নাম হল অ্যাডলফ | পিতা এলোইস হিটলারের নামানুসারে তাঁর নাম হয়েছে অ্যাডলফ হিটলার | হিটলারের পিতা এলোইস হিটলারের ( হিটলারের পিতার নাম এলোইস হিটলার) প্রথম স্ত্রীর নাম ছিল আন্না গ্লাস্ল হোরের | এই স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে 19 বছর বয়সী ফ্রান্সিস্ক মাৎজেল্সবার্গার
নামক চাকুরানির সাথে হিটলারের পিতার প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠে |কিন্তু রোমান ক্যাথলিক মতে তিনি মাৎজেল্সবার্গার কে বিবাহ করতে ব্যর্থ হন
| কিন্তু মাৎজেল্সবার্গারের সাথে হিটলারের পিতা এলোইস হিটলারের সম্পর্ক অটুট থাকে |1876 সালে ক্লারা পোলজল এই পরিবারে পরিচারিকা হিসাবে যোগদান করেন| মূলত ক্লারা ছিলেন এলোইসের দূর সম্পর্কের ভাতিজি | 1880 সালের 7নভেম্বর এলোইসের প্রথম স্ত্রী আন্না গ্লাল্স হোরের সাথে এলোইসের বিবাহ বিচ্ছেদ হয় | অবশ্য এই বিবাহ বিচ্ছেদে গির্জার অনুমোদন ছিল না | 1882 সালের 13ই জানুয়ারি এলোইস এবং তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী মাৎজেল্সবার্গারের প্রথম সন্তানের জন্ম হয় | এই সন্তানের নাম রাখা হয়েছিল এলোইস মাৎজেল্সবার্গার | 1883 সালের 6ই এপ্রিল রোগে আক্রান্ত হয়ে এলোইসের প্রথম স্ত্রী আন্না গ্লাল্স হোরের মৃত্যু হলে এলোইস এবং মাৎজেল্সবার্গারের বিবাহে আর কোনো আইনি বাধা থাকে না এবং ওই বছরের 22শে মে উভয়ের বিবাহ সম্পন্ন হয় | এরপর মাৎজেল্সবার্গার দ্বিতীয় সন্তান প্রসবের জন্য ভিয়েনা যান এবং সেখানে এ্যাঞ্জেলা হিটলারের জন্ম হয় | এই সময় মাৎজেল্সবার্গার ফুসফুসের দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হন | তাঁকে র্যান্সহোফেন গ্রামে এনে রাখা হয় | এই সময় তাঁকে দেখা শোনার জন্য ক্লারা কে পুনরায় আনা হয় | 1884 সালের 10ই আগষ্ট মাৎজেন্সবার্গার মৃত্যুবরন করেন | এর কিছুদিন পর এলোইসের দ্বারা ক্লারা গর্ভবতী হন | এরপর তিনি ক্লারাকে বিবাহ করার উদ্যোগ নিলে দূর সম্পর্কীয় ভাতিজি বলে গির্জা বাধা দেয় | পরে 1885 সালে 7ই জানুয়ারি গির্জা এই বিবাহে সম্মতি দেয় | বিবাহের 5মাস পরে অথাৎ 1885
সালের 17ই মে তাঁর প্রথম পুত্র গুস্তাভের জন্ম হয় | 1886 সালের 25শে সেপ্টেম্বর জন্ম নেয় তাঁর দ্বিতীয় কন্যা আইডা | 1887 সালে তাঁর তৃতীয় সন্তান ওট্টো জন্মগ্রহনের পরপরই মারা যান | ডিফথেরিয়া রোগে ওট্টো মারা যায় | 1888 সালের. 2রা জানুয়ারি কন্যা আইডা মারা যায় | এরপর 1889. সালের 20 শে এপ্রিল জন্মগ্রহন করেন অ্যাডলফ হিটলার | হিটলার ছিলেন তাঁর পিতার তৃতীয় স্ত্রীর তৃতীয় সন্তান | পরের আলোচনায় হিটলারের রাজনৈতিক জীবনকে তুলে ধরব | আজ এ পর্যন্তই থাক|


পুরানো কৃষ্ণনগর