Thursday, 1 October 2015

বাদকুল্লার জমিদার গগন চন্দ্র বিশ্বাস

1849 সালের নদীয়া জেলার সদর দপ্তর. কৃষ্ণনগরের সন্নিকটে মাধবপুর নামক গ্রামের এক জমিদার বংশে গগন চন্দ্র বিশ্বাস জন্ম গ্রহণ করেন | তাঁর পিতা শ্রীমন্ত বিশ্বাস সংস্কৃত , আরবি ও ফরাসি ভাষায় শিক্ষিত সজ্জন ব্যক্তি ছিলেন |

বাদকুল্লার প্রতিটি মানুষ তাঁর নাম জানেন | বাদকুল্লার উন্নয়নে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য | গগন চন্দ্র বিশ্বাস একজন ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন | তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে এফ.এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষায় নির্বাচিত হয়ে শিবপুর বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ বাংলার সর্ব প্রথম ব্যাচে প্রথম বিভাগে দিতীয় স্থান অধিকার করে ব্যাচেলর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন |
গগন চন্দ্র বিশ্বাসের কর্মজীবনের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা এখন আপনাদের সামনে তুলে ধরছি | গগন চন্দ্র বিশ্বাসের ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি কৃষ্ণনগরে জলঙ্গী নদীর উপর রেলের ব্রীজ নির্মাণে 9 লক্ষ টাকার টেন্ডার পান | ব্রীজ নির্মাণ কালে তিনি যখন তার টেবিলের উপর ব্রীজের নকশার কাজ করছিলেন, সেই সময় সরকারের তরফে আসা এক উচ্চপদস্থ বৃটিশ সাহেব তার টেবিলের উপর জুতো সমেত পা তুলে দেয় | তখন তিনি সাহেবের আচরণে অতিশয় অপমান বোধ করায় প্রচন্ড ক্রুদ্ধ হয়ে তাহার হাতে থাকা স্কেল দিয়ে সাহেবের পায়ে সজোরে আঘাত করেন | সাহেব চটে গিয়ে প্রতিশোধ নেবার জন্য ষড়যন্ত্র করে ব্রীজের বিশেষ ক্ষতিসাধন করে | পরে ব্রীজে ফাটল দেখা দেয় | তিনি অপরিসীম ক্ষতি সীকার করে তৈরী ব্রীজ ভেঙে নিজ খরচায় পুনরায় নূতন ব্রীজ তৈরী করে দেন | এই ক্ষতি পূরন করতে গিয়ে তার কলিকাতার বৃহৎ বাড়ী, জলপাইগুড়ির চা বাগান ও নদীয়ার কিছু সম্পত্তি বিক্রি করতে হয় | প্রখ্যাত সাংবাদিক শিশির কুমার ঘোষ তাঁর অমৃতবাজার পত্রিকায় এই ঘটনা উল্লেখ করে গগন চন্দ্র বাবুর তেজোদীপ্ত. চারিত্রিক দৃঢ়তার ভূয়সী প্রশংসা করেন |

এবার আসি বাদকুল্লার কথায়. |
গগন চন্দ্র বাবু বাদকুল্লায় এসে বাদকুল্লার জমিদারি ক্রয় করেন | বাদকুল্লায় কিভাবে আদর্শ জনবসতি গড়ে তোলা যায় তার সকল প্রয়াস তিনি করেন | বাদকুল্লার উন্নতি সাধনে তিনি রেল কোম্পানিকে 500 বিঘার মত জমি দান করে সেই জমিতে বাদকুল্লার রেল স্টেশন তৈরী করেন | ইহার যাবতীয় ব্যয় তিনি গ্রহণ করেন | স্থানীয় জনগণের সারথে তিনি বাদকুল্লায় একটি হাট ও বাজার তৈরী করেন | এখন তাহা "গগন বাবুর বাজার " নামে পরিচিত | বাদকুল্লার ভিতর দিয়ে অঞ্জনা নদী প্রবাহিত হওয়ায় লোকজনের সড়ক পথে নদী পারাপার করতে অসুবিধা হত | তিনি নিজ পরিকল্পনায় নিজ খরচে বাদকুল্লা বাজারের পাশে গাংনীতে, আড়বান্দীতে ও হেমায়েৎপুরে অঞ্জনা নদীর উপর তিনখানা ব্রীজ তৈরী করে দেন | তিনি বাদকুল্লায় নিরক্ষরতা দূরীকরণের জন্য নিজ ব্যয়ে একটি পাঁকা বাড়ি তৈরী করেন. এবং সেই বাড়িতেই প্রথম একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় তৈরী করেন | পরবর্তীতে এই ভবনে বাদকুল্লার প্রথম লাইব্রেরী স্থাপন করা | 1952 সালে বাদকুল্লার অপর দুই কৃতি সন্তান ফণীভূষণ মন্ডল, রেবতীকান্ত রায় এবং তৎকালীন বেশ কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তি ওই ভবনে বাদকুল্লা ইউনাইটেড ক্লাব. স্থাপন করেন. নানা সামাজিক কাজকর্ম করার জন্য |

এতদসব সামাজিক কাজকর্ম করার পরও গগন চন্দ্র বাবু কিন্তু যথাযথ মর্যাদা পাননি | 1935 তিনি মারা যান |

তথ্য সূত্র -- সাধীনতা সংগ্রামী মাহিষ্য প্রবাদ পুরুষ গগন চন্দ্র বিশ্বাস পুস্তক

No comments:

Post a Comment