Thursday, 1 October 2015

হিটলার

হিটলার সম্পর্কিত পূর্ববর্তী আলোচনায় আমি হিটলারের পিতা অথাৎ এলোইস হিটলারের বৈবাহিক সম্পর্কের ঘটনাক্রম তুলে ধরেছিলাম | আজ আমি হিটলার কিভাবে জার্মানির ক্ষমতা দখল করলেন তা নিয়েই আলোচনা করব | মায়ের মৃত্যুর পর সংসারের বন্ধন থেকে পুরোপুরি সম্পর্ক ছিন্ন করেন | এবং ভিয়েনা চলে আসেন | ভিয়েনাতে এসে তিনি মজুরের কাজ শুরু করেন | এরপর রং বিক্রি করতে আরম্ভ করেন | এই ভিয়েনা অবস্থান কালেই তাঁর মধ্যে জেগে ওঠে চরম ইহুদী বিদ্বেষ | কারণ তখন জার্মানির অধিকাংশ কলকারখানা , সংবাদপত্রের মালিক ছিল ইহুদীরা | দেশের অর্থনীতির অনেকটাই ইহুদীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হত | কিন্তু হিটলার কিছুতেই এটিকে মেনে নিতে পারছিলেন না যে, জার্মান দেশে বাস করে জার্মানিদের উপরেই প্রভুত্ব করবে ইহুদীরা | 1912 সালে তিনি জার্মানি ছেড়ে এলেন মিউনিখে | দুঃখ কষ্টের মধ্য দিয়ে হিটলারের কেটে গেল আরও দুটি বছর | এরপর 1914 সালে শুরু হল প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ | হিটলার সৈনিক হিসাবে যুদ্ধে যোগ দিলেন | যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর গোটা জার্মানি জুড়ে দেখা দিল বিশৃঙ্খলা আর অনাহার | তার মধ্যেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠল বিভিন্ন বিপ্লবী দল, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল | এদের উপর গোয়েন্দা গিরি করার জন্য হিটলার কে নিয়োগ করল কতৃপক্ষ | সেই সময় প্রধান রাজনৈতিক দল ছিল লের্বার পার্টি | হিটলার সেই পার্টির সদস্য হলেন | অল্পদিনের মধ্যেই পাকাপাকিভাবে পার্টিতে নিজের স্থান করে নিলেন হিটলার | এক বছরের মধ্যেই তিনি হলেন পার্টি প্রধান | দলের নতুন নাম রাখা হয় ' ন্যাশনাল ওয়ার্কার্স পার্টি ' | পরবর্তীকালে এই দলকেই বলা হত ' নাৎসি পার্টি ' | 1920 সালের 24ফেব্রুয়ারি প্রথম নাৎসি দলের সভা ডাকা হল | এতেই হিটলার প্রকাশ করলেন তাঁর পঁচিশ দফা দাবি | এরপর হিটলার প্রকাশ করলেন স্বস্তিকা চিহ্ন যুক্ত দলের পতাকা | ক্রমশই নাৎসি দলের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে | তিন বছরের মধ্যেই দলের সদস্য সংখ্যা হয় প্রায় 5600 0 এবং এটি জার্মানির রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রাহন করতে থাকে | হিটলার চেয়েছিলেন মিউনিখে তাঁর দল ছাড়া অন্য কোনো দলের যাতে অস্তিত্ব না থাকে | এক সময় তাঁর পরিকল্পিত এক রাজনৈতিক চক্রান্ত ব্যর্থ হয় | এবং পুলিশের হাতে ধরা পড়েন | তাঁকে এক বছরের জন্য ল্যান্ডসবার্গের
পুরোনো দূর্গে বন্দি করে রাখা হয় | জেল থেকে মুক্তি পেয়ে আবার রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন হিটলার | তার উগ্র মতবাদ. , বলিষ্ঠ বক্তব্য জার্মানদের আকৃষ্ট করে | দলে দলে যুবক তাঁর দলের সদস্য হতে আরম্ভ করে | সমস্ত দেশে জনপ্রিয় নেতা হয়ে উঠলেন হিটলার | 1933 সালের নির্বাচনে বিপুল ভোট পেলেন কিন্তু সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেলেন না | পার্লামেন্টের 647টির মধ্যে তার দলের আসন ছিল 288 | এর ফলে হিটলার বুঝতে পারলেন যে ক্ষমতা যদি দখল করতে হয় তাহলে অন্য পথ ধরতে হবে | কোনো দল সংখ্যা গরিষ্ঠতা না পাওয়ায় হিটলার পার্লামেন্ট ভেঙে দিলেন | এবার ক্ষমতা দখলের জন্য শুরু হল তাঁর ঘৃণ্য চক্রান্ত | বিরোধীদের অনেকেই খুন হলেন | অনেকে মিথ্যা অভিযোগে জেলে গেল | বিরোধী দলে নিজের দলের লোক প্রবেশ করিয়ে দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা তৈরি করলেন | অল্পদিনের মধ্যেই বিরোধী পক্ষকে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে হিটলার হয়ে উঠলেন শুধু নাৎসি দলের নয়. , সমগ্র জার্মানির ভাগ্য বিধাতা | এই ভাবে হিটলার বিভিন্ন উত্থান পতনের. মধ্য দিয়ে নিজেকে জার্মানির অধিপতি হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন. | পরবর্তী আলোচনায় হিটলারের নেতৃত্বে জার্মানির প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে যোগদান নিয়ে আলোচনা করব |


No comments:

Post a Comment