হিটলার সম্পর্কিত পূর্ববর্তী আলোচনায় আমি হিটলারের পিতা অথাৎ এলোইস
হিটলারের বৈবাহিক সম্পর্কের ঘটনাক্রম তুলে ধরেছিলাম | আজ আমি হিটলার কিভাবে
জার্মানির ক্ষমতা দখল করলেন তা নিয়েই আলোচনা করব | মায়ের মৃত্যুর পর
সংসারের বন্ধন থেকে পুরোপুরি সম্পর্ক ছিন্ন করেন | এবং ভিয়েনা চলে আসেন |
ভিয়েনাতে এসে তিনি মজুরের কাজ শুরু করেন | এরপর রং বিক্রি করতে আরম্ভ করেন |
এই ভিয়েনা অবস্থান কালেই তাঁর মধ্যে জেগে ওঠে চরম ইহুদী বিদ্বেষ | কারণ
তখন জার্মানির অধিকাংশ কলকারখানা , সংবাদপত্রের মালিক ছিল ইহুদীরা | দেশের
অর্থনীতির অনেকটাই ইহুদীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হত | কিন্তু হিটলার কিছুতেই
এটিকে মেনে নিতে পারছিলেন না যে, জার্মান দেশে বাস করে জার্মানিদের উপরেই
প্রভুত্ব করবে ইহুদীরা | 1912 সালে তিনি জার্মানি ছেড়ে এলেন মিউনিখে |
দুঃখ কষ্টের মধ্য দিয়ে হিটলারের কেটে গেল আরও দুটি বছর | এরপর 1914 সালে
শুরু হল প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ | হিটলার সৈনিক হিসাবে যুদ্ধে যোগ দিলেন | যুদ্ধ
শেষ হওয়ার পর গোটা জার্মানি জুড়ে দেখা দিল বিশৃঙ্খলা আর অনাহার | তার
মধ্যেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠল বিভিন্ন বিপ্লবী দল, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল | এদের
উপর গোয়েন্দা গিরি করার জন্য হিটলার কে নিয়োগ করল কতৃপক্ষ | সেই সময়
প্রধান রাজনৈতিক দল ছিল লের্বার পার্টি | হিটলার সেই পার্টির সদস্য হলেন |
অল্পদিনের মধ্যেই পাকাপাকিভাবে পার্টিতে নিজের স্থান করে নিলেন হিটলার | এক
বছরের মধ্যেই তিনি হলেন পার্টি প্রধান | দলের নতুন নাম রাখা হয় ' ন্যাশনাল
ওয়ার্কার্স পার্টি ' | পরবর্তীকালে এই দলকেই বলা হত ' নাৎসি পার্টি ' |
1920 সালের 24ফেব্রুয়ারি প্রথম নাৎসি দলের সভা ডাকা হল | এতেই হিটলার
প্রকাশ করলেন তাঁর পঁচিশ দফা দাবি | এরপর হিটলার প্রকাশ করলেন স্বস্তিকা
চিহ্ন যুক্ত দলের পতাকা | ক্রমশই নাৎসি দলের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে | তিন
বছরের মধ্যেই দলের সদস্য সংখ্যা হয় প্রায় 5600 0 এবং এটি জার্মানির
রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রাহন করতে থাকে | হিটলার চেয়েছিলেন
মিউনিখে তাঁর দল ছাড়া অন্য কোনো দলের যাতে অস্তিত্ব না থাকে | এক সময় তাঁর
পরিকল্পিত এক রাজনৈতিক চক্রান্ত ব্যর্থ হয় | এবং পুলিশের হাতে ধরা পড়েন |
তাঁকে এক বছরের জন্য ল্যান্ডসবার্গের
পুরোনো দূর্গে বন্দি করে রাখা হয় | জেল থেকে মুক্তি পেয়ে আবার রাজনৈতিক
ষড়যন্ত্রের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন হিটলার | তার উগ্র মতবাদ. , বলিষ্ঠ বক্তব্য
জার্মানদের আকৃষ্ট করে | দলে দলে যুবক তাঁর দলের সদস্য হতে আরম্ভ করে |
সমস্ত দেশে জনপ্রিয় নেতা হয়ে উঠলেন হিটলার | 1933 সালের নির্বাচনে বিপুল
ভোট পেলেন কিন্তু সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেলেন না | পার্লামেন্টের 647টির মধ্যে
তার দলের আসন ছিল 288 | এর ফলে হিটলার বুঝতে পারলেন যে ক্ষমতা যদি দখল করতে
হয় তাহলে অন্য পথ ধরতে হবে | কোনো দল সংখ্যা গরিষ্ঠতা না পাওয়ায় হিটলার
পার্লামেন্ট ভেঙে দিলেন | এবার ক্ষমতা দখলের জন্য শুরু হল তাঁর ঘৃণ্য
চক্রান্ত | বিরোধীদের অনেকেই খুন হলেন | অনেকে মিথ্যা অভিযোগে জেলে গেল |
বিরোধী দলে নিজের দলের লোক প্রবেশ করিয়ে দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা তৈরি করলেন |
অল্পদিনের মধ্যেই বিরোধী পক্ষকে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে হিটলার হয়ে
উঠলেন শুধু নাৎসি দলের নয়. , সমগ্র জার্মানির ভাগ্য বিধাতা | এই ভাবে
হিটলার বিভিন্ন উত্থান পতনের. মধ্য দিয়ে নিজেকে জার্মানির অধিপতি হিসাবে
প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন. | পরবর্তী আলোচনায় হিটলারের নেতৃত্বে
জার্মানির প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে যোগদান নিয়ে আলোচনা করব |
No comments:
Post a Comment